একমাত্র ছেলে হাউজিং কোম্পানির ইলেকট্রিকের ঠিকাদার। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকার ফার্মগেটে ফ্ল্যাট বাসায়। আট বছর ধরে তিনি অন্ধ ও পঙ্গু মায়ের খোঁজ নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, যমুনার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চর জাজুরিয়া গ্রামের মৃত মুনা খানের বাড়ির আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন বৃদ্ধা রহিমা খানম (ছদ্মনাম)। কেউ দিলে খাবার জোটে, না দিলে রাত কাটে অনাহারে। 

এভাবেই চলছে তার জীবন। চলতি মাসে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেলে তার কষ্টও বেড়ে যায়। এতে তিনি চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে কয়েক দিন আগে এলাকাবাসীর সহায়তায় ছয়টি টিন দিয়ে একটি ছাপড়া তুলে দেওয়া হয়। ঘরের তিন দিকে বেড়া থাকলেও সামনের অংশ ফাঁকা। ফলে ওই অংশ দিয়ে হু হু করে ঢুকছে ঠান্ডা বাতাস। তাই পলিথিন দিয়ে বাতাস ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে মৃত মুনা খানের স্ত্রী লাইলী খানম (৬০) নিজেও অভাবী। দুই বেলা পেটপুরে খেতে পান না। তিনি অন্ধ ও পঙ্গু মোরশেদা খানমের দেখভাল করেন।

লাইলী খানম, রেহানা বানু ও মাসুদ খান বলেন, খরস্রােতা যমুনার শাখা নদীর ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায় রহিমা খানমের। পরে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চর জাজুরিয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর স্বামী ও বড় ছেলের মৃত্যুতে তিনি খুবই অসহায় হয়ে পড়েন। নিজে খেয়ে না খেয়ে ও আনসার ভিডিপির চাকরি ও বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করে ছোট ছেলেকে মানুষ করেন। 

ছেলে লেখাপড়া তেমন না করে ২৫ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে হাউজিং কোম্পানিতে ইলেকট্রিক কাজ করে বেশ টাকার মালিক হন। এরপর নিজেই হাউজিং কোম্পানির ইলেকট্রিকের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। বিয়ে করে এখন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ফ্ল্যাট বাসায় স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ আট বছর ধরে মায়ের কোনো খোঁজখবর নেন না।

ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি কোনো পরিচয় ও বাসার ঠিকানা দেননি।। ফলে স্বামী-সন্তানের শোকে কাঁদতে কাঁদতে রহিমা খানম অন্ধ হয়ে গেছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পেরে তার দুই পা পঙ্গু হয়ে গেছে। তিনি হাঁটতে ও দাঁড়াতে পারেন না। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে তার দিন কাটে।

খাসকাউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হযরত আলী মাস্টার বলেন, আমি একটানা ২৭ বছর ও ৩ বছর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। সে সময়ে সহযোদ্ধা চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন রহিমা খানম। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে টানা ১০ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি চৌহালী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগেরও নেতৃত্বে ছিলেন। 

আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারি রহিমা খানম আওয়ামী লীগের সব আন্দোলন সংগ্রামের সম্মুখ সারির সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন চৌহালী উপজেলা আনসার ভিডিপির দলপতি ছিলেন।

শত শত অসহায় অনাহারী নারীদের তিনি সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাদের মুখে আহার তুলে দিতে তিনি অফিসে অফিসে ঘুরে বিধবাভাতা, বয়স্কভাতার কার্ড, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার কার্ড, ভিজিডি ও ভিজিপি কার্ড করে দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি রিলিফ ও ত্রাণ পাইয়ে দিয়েছেন বহু অসহায় মানুষকে।

গর্ভবতী মা ও দুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। আজ তার এ অসহায় অবস্থায় বিত্তবান একমাত্র ছেলে পাশে নেই। ৮ বছর ধরে মায়ের কোরনা খোঁজ-খবর নেয় না। এখন তার জীবন চলে অন্যের দয়ায়। এটা খুবই কষ্টদায়ক। আমি এই অসহায় সমাজসেবী বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াতে দেশের ধনাঢ্য ও বিত্তবানদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি।

চৌহালী আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, উনার পক্ষ থেকে নিকট আত্মীয়দের কেউ আবেদন করলে ঘরের জন্য টিন ও বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হবে।

শুভ কুমার ঘোষ/এসপি