বেতন-সেশন ফি বকেয়া, বই পায়নি প্লাবন
কিশোর প্লাবন দে
প্লাবন দে। সুনামগঞ্জ এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। করোনাকালে সময় কেটেছে বাসায় বসে, বাবার ব্যবসায় সাহায্য করে। এখন বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু বকেয়া বেতন ও সেশন ফি জমা দিতে না পারায় বই পায়নি সে। অভাবের সংসারে এ টাকা জোগাড় করার ক্ষমতাও নেই তার বাবার।
প্লাবন দের বাবা পান্ডব দে একজন কর্মকার। তিনি বলেন, বাপ দাদার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তার এ ব্যবসা। ব্যবসার কদর নেই আগের মতো। প্রতিদিন দা, কুড়াল, কাচি, খুন্তিসহ গেরস্থ পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করেন ফুটপাতে বসে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এই কয়েক বছরে কৃষিতে বিপ্লব হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে এই খাতে এখন ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক সব মেশিন। ফলে ব্যবসায় চলছে মান্দা। বেচাকেনা নেই। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়। আবার কোনো দিন তাও হয় না।
প্লাবন দের মা সন্ধ্যা দে একজন গৃহিণী। সংসারের দূরাবস্থা দেখে নিজেই পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন। এজন্য একটি কাপড়ের দোকানে কাজও করছেন। প্রতিদিন মজুরি ৩০ টাকা। মাস শেষে ৯০০ টাকা হাতে জমা হলে আত্মতৃপ্তিতে সেগুলো সংসারের কাজে লাগান।
বিজ্ঞাপন
স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে প্লাবনকেও দোকানে বসান তারা। সুনামগঞ্জের মধ্যবাজারের ফুটপাতে বাপ- ছেলে বসে প্রতিদিন। এ যেন ছেলের একটি প্রশিক্ষণ। যুগ যুগ ধরে চলা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কর্মকারের ব্যবসা। বাপ-দাদার পেশায় প্রশিক্ষিত হচ্ছে প্লাবন।
পান্ডব দে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কর্মকার। মানে আমরা কর্ম করে খাই। বাপ দাদার পেশা। ছাড়তেও পারি না আবার ধরে রাখতেও পারছি না। বিপদেই আছি। যে বেচাকেনা হয় তা দিয়ে সংসার চলে না।
এর মধ্যে করোনাকালীন অনেকদিন লকডাউন ছিল। দোকানে বসতে পারিনি। ধারকর্জ করে পরিবার চালিয়েছে। প্রতি মাসে দুহাজার করে বাসা ভাড়াও গুণতে হয়। ভাবছিলাম ছেলেটাকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করাব। কিন্তু সেটাও করতে পারছি না টাকার অভাবে।
তিনি বলেন, করোনার জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন দিতে পারিনি। এখন স্কুল খোলার পর জানতে পারি ভর্তিসহ ৩৬০০ টাকা বকেয়া হয়েছে। এই টাকা আমি দিতেও পারিনি। ভর্তিও করতে পারিনি। বইও দেয়নি তারা।
পান্ডব দের বড় ভাইয়ের বউ আলয় দে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দেবর একবার খাইলে আরেকবার উপোস থাকে। তবুও তাদের ইচ্ছা একমাত্র ছেলেকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করার। কিন্তু স্কুল থেকে এখনও বই দেয়নি। বলছে, ভর্তি না হলে বই দিবে না।
প্লাবন দের মা সন্ধ্যা দে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বকেয়া বেতন ও সেশন ফি মওকুফ করার জন্য আবেদন করেছে আমার ছেলে। তারা বলেছে, ২৭০০ টাকা দিতেই হবে। না হলে ভর্তি হতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের বন্ধুরা নতুন বই পেয়েছে। বাসায় পড়াশুনা করছে। তার বই নেই কেন যখন ছেলে প্রশ্ন করে উত্তর দিতে পারি না।
প্লাবন দে ঢাকা পোস্টকে বলে, আমার বন্ধুরা বই পেয়েছে। আমি এখনও পাইনি। স্কুলে গিয়েছিলাম। স্যার বলেছে ভর্তি না হলে বই দিবে না। আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি পড়াশুনা করতে চাই।
এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনছান মিয়া এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয়। সরকারি বই এখনও শিক্ষার্থী প্লাবন দে কেন পায়নি এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্যামেরার সামনে তিনি কথা বলতে রাজি নন।
ক্যামেরা বন্ধ করে অফলাইনে বলেন, সরকারি বই এলেই শিক্ষার্থীরা বই পাবে। সে হয়তো বিদ্যালয়ে আসেনি তাই বই পায়নি।
বকেয়া বেতন ও সেশন ফি মওকুফের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ১৬০০ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে। একজনকে ফি মওকুফ করতেই পারি। তবে কেন এসব কথা তারা ঢাকা পোস্টকে বলল এ বিষয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীকে ডাকবেন।
সাইদুর রহমান আসাদ/এসপি