গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফটকের ভেতরে বেসরকারি দুটি হাসপাতাল

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনুমোদনহীন এসব ক্লিনিকের বেশির ভাগই অবৈধ। ফলে গরিব রোগীদের সরকারি চিকিৎসা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসার নামে মানুষকে হয়রানি করে এসব হাসপাতালের নিয়োজিত দালালরা।

আইন অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালের এক কিলোমিটার বা কিছুক্ষেত্রে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইন তো মানা হচ্ছেই না, উল্টো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের নিচ্ছে ভাগিয়ে।

আবার সরকারি হাসপাতাল থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিতে হয় সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ছাড়পত্র। কিন্তু এখানে অবৈধভাব দুটি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও এগুলোর নেই কোনো সনদ।

সরেজমিনে দেখা যায়, গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফটকেই গড়ে উঠেছে রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রাজ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অবস্থা এমন যে মনে হয়, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার দুটিতে যেতে অতিক্রম করতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটক। এমনকি এখানে ঢুকতে গেলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটক দিয়েই যেতে হয়।

জানা যায়, গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েক শ মিটারের মধ্যে রয়েছে আরও ৪টা ক্লিনিক। ফলে সরকারি সেবা পাওয়া এখানে সোনার হরিণের মতো বলে জানান সেবা নিতে আসা রোগীরা।

সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যায়। বিভিন্নভাবে ভুল বুঝিয়ে চিকিৎসার নামে হয়রানি করে এসব দালাল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে বিপুল টাকা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ক্লিনিকগুলো। 

গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা এনজিওকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, বোনকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক নারী বিভিন্নভাবে ভুল বুঝিয়ে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এরপর দেয় একগাদা টেস্ট। পরে জানলাম এসব টেস্ট করাতে সরকারি হাসপাতালে এক-তৃতীয়াংশ টাকা লাগত।

কয়েক মাস আগে আলীনগরের ফাতেমা বেগম নামের এক নারী গর্ভবতী হওয়ায় চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনি জানান, সেখান থেকে এক নারী বিভিন্নভাবে নানা কথা বলে নিয়ে যায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কিন্তু সেখানে গিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলেও কোনো চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখা হয়।

স্থানীয় শিক্ষক মাতোয়ারা বেগম বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘেঁষে এভাবে অবৈধভাবে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সের সহযোগিতায় এসব ক্লিনিক গড়ে ওঠে। অথচ বেশির ভাগেরই নেই লাইসেন্স। নিয়ম-নীতি না মেনেই চলছে এসব ক্লিনিক।

রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নওগাঁ জেলার পোরসা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুব হাসানের মালিকানা রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের ক্লিনিক চালাচ্ছেন এই কর্মকর্তা।

জানা যায়, বর্তমানে পোরসা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুব হাসান ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। কিছুদিন আগে আবারও নিজ এলাকা গোমস্তাপুরে ফিরতে আবেদন করেছেন তিনি। তবে রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিজের মালিকানা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডা. মাহবুব হাসান। তিনি সেখানে শুক্রবার ও শনিবার নিয়মিত রোগী দেখেন।

মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার মালিকানা নেই। তবে সেখানকার একটি রুমে আমি নিয়মিত চেম্বার করি। এ ছাড়া হাসপাতালের পাশে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার না করার কোনো বিধান নেই। এমনকি রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সব আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন পায়নি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, সরকারি হাসপাতাল থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা যাবে না। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তা অনুসরণ করা হয় না। সরকারি হাসপাতাল ঘেঁষে ডায়াগনস্টিক-ক্লিনিক স্থাপন ও অনুমোদনবিহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএ