অন্য ধর্মের কিংবা অপরিচিত বলে অসহায় নারীকে রাস্তায় ফেলে রাখেননি রবিউল ইসলাম। নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে নব্বই বছর বয়সী সাবিত্রি কর্মকারকে মায়ের মতো দেখাশুনা করছেন তিনি। এক বা দুই মাস নয় দীর্ঘ আট মাস নিজের বাসায় রেখে এই দায়িত্ব পালন করছেন। মাঝখানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে টানা দুই মাস শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করিয়েছেন। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলাতে পারেননি অসহায় সাবিত্রি কর্মকারের স্বজনদের।

আশ্রয়দাতা রবিউল ইসলাম জানান, প্রায় আট মাস আগে এক লোক এই নারীকে (সাবিত্রি কর্মকার) বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ড রূপাতলী গ্যাসটারবাইন এলাকার পাটনি বাড়ি রোডে রেখে উধাও হয়ে যান। পরে সাবিত্রি কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে দুই মাস চিকিৎসা শেষে পুনরায় আমার এই বাসায় (পাটনি বাড়ি রোড) এনে রাখি। তার সেবার জন্য আরেক নারীকে আমি রেখেছি। সেই নারী এসে সাবিত্রি কর্মকারের কাপড় ধুয়ে দিয়ে যান। খাবার খাইয়ে দিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, সাবিত্রি কর্মকার একজন মানুষ। আমি চাইলে তাকে দূরে রাস্তায় নিয়ে ফেলে রেখে আসতে পারতাম। কিন্তু সেটি করলে অমানবিক হতো। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, তার দেখভালের দায়িত্ব আমি মন থেকেই গ্রহণ করেছি। কেউ চাইলে তাকে সহায়তাও করতে পারেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীকে নিজের বাসায় আশ্রয় দেওয়ায় অনেকে তার সমালোচনা করেন উল্লেখ করে রবিউল বলেন,  এলাকার অনেকেই আছেন যারা অসহায় সাবিত্রি কর্মকারকে হেয় চোখে দেখেন। তার মলমূত্রযুক্ত কাপড় ধুতে গেলে কথা শুনতে হয়। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন, কেন এই অসহায়কে আশ্রয় দিয়েছি?

জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা অনুয়ায়ী সাবিত্রি কর্মকারের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১ জানুয়ারি। তার বাবা ভদ্রকান্ত কর্মকার আর মা সুকুদা কর্মকার। সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়া এলাকার ৭৭৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা তিনি। 

তবে রবিউল জানান, তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জেনেছেন অনেক বছর আগে ওই এলাকায় সাবিত্রি কর্মকার ভাড়ায় বসবাস করতেন। সেখানকার বর্তমান বাসিন্দারা সাবিত্রি কর্মকারকে চেনেন না।

তবে সাবিত্রি কর্মকার জানিয়েছেন, তার বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। ওই উপজেলার ঠিক কোন এলাকায় বাড়ি তা বলতে পারেন না। স্বজন, ছেলে-মেয়ে আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে চুপ করে থাকেন। 

সাবিত্রি কর্মকার বলেন, বাড়িঘরও নেই, ছেলে-মেয়ে কিছুই নেই আমার। এইখানে এসেছি ভাসতে ভাসতে। কীভাবে এলাম তাও জানি না। নয় মাস ধরে এখানে আশ্রয়ে আছি। রবিউল আমার সব দেখভাল করছে।

তিনি জানান, প্যারালাইজড হয়ে ঠিকমতো উঠে বসতেও পারেন না তিনি। শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে আছে, নড়াচড়া করতে পারেন না।

এদিকে খবর পেয়ে সাবিত্রি কর্মকারকে জেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

 

বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, অসহায় এই নারীকে আর্থিক সহায়তার জন্য রবিউল আমার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে আলাপ করায় তিনি খোঁজ নিতে বলেন। আজ সরেজমিনে দেখলাম সত্যিকার অর্থেই সাবিত্রি কর্মকার অসহায়। তাকে দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে মানবিক কাজ করছেন রবিউল ইসলাম। সেই সঙ্গে আমাদেরও মানবিক কাজ করার সুযোগ করে দিলেন। 

প্রবেশন কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে সাবিত্রি কর্মকারের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। রোববার (০৬ ফেব্রুয়ারি) তার হাতে টাকা তুলে দেওয়া হবে। আশা করি এই টাকায় তার উপকার হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর