সম্ভাবনাময় মাশরুম চাষে ভোক্তা-সংকট, তবু কৃষক লাভবান
মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। চিকিৎসকদের মতে, এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও রোগ প্রতিরোধক। জেলায় মাশরুম চাষ করে উৎপাদন বাড়লেও খাদ্যাভ্যাস না থাকায় মাশরুম চাষে বিমুখ হয়েছেন অনেকেই। ধৈর্য আর পরিশ্রম করে অনেকেই টিকে রেখেছেন মাশরুম চাষ।
মেহেরপুর জেলায় মাশরুম উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাজারজাত ও ভোক্তা-সংকটে পড়েছেন উৎপাদনকারীরা। তবে মাশরুম চাষে সফলতা পেয়েছেন মেহেরপুরের বেশ কয়েকজন চাষি। তাদের মধ্যে মেহেরপুরের যুবক সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই।
বিজ্ঞাপন
প্রথমে লোকসান হলেও হাল ছাড়েননি সাইফুল। বীজ আর প্রযুক্তিগত সমস্যা কাটানোর পর আর পিছু তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে মাশরুম বেচে তিনি এখন লাখপতি। তার কাছ থেকে অনেকেই মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মানুষের মধ্যে এর পুষ্টিগুণ আর উপকারিতা নিয়ে প্রচার-প্রচারণাসহ ভোক্তাচাহিদা বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগকে উদ্যোগী হওয়ার দাবি মাশরুম খামারিদের।
মাশরুম খামারি সাইফুল ইসলাম জানান, বেকারত্ব থেকে কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে বছর ছয়েক আগে বাংলাদেশ ঢাকার সাভারের মাশরুম সেন্টার থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ি ফিরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রযুক্তিগত সমস্যা ও বাস্তব প্রশিক্ষণের অভাবে পরপর দুই বছর লোকসান গুনতে হয়। প্রথমেই হোঁচট খাওয়ার পর থেমে যাচ্ছিলাম। পরে ভাবলাম অনেকেই এখান থেকে লাভবান হচ্ছেন এবং মাশরুম চাষে সরকারিভাবে উদ্যোগ রয়েছে। সে বিবেচনায় একেবারে থামেননি তিনি। আরও দুই বছর ধরে বীজ তৈরি ও ছত্রাক আক্রমণ ঠেকানো নিয়ে কাজ করেন। এবার ধরা দেয় সাফল্য। নিজের তৈরি বীজ আর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাম্পার ফলন পান তিনি।
বিজ্ঞাপন
গেল দুই বছর সফলতার সঙ্গে মাশরুম বিক্রি করে তিনি এখন লাখপতি। বর্তমানে তিনি মাশরুম চাষে একজন সফল উদ্যোক্তা। প্রায় চার বিঘা জমির ওপর ‘এসএম মাশরুম ঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে মাশরুম খামারটি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে এসএম মাশুরুম ঘরের মাশরুম। কাঁচা ও শুকনা দুভাবেই মাশরুম বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ২০০ কেজি মাশরুম পাওয়া যাচ্ছে এই খামার থেকে। প্রতি মাসে এখন আয় হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা।
সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কাজ করছেন স্থানীয় যুবক মনিরুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, ধানের খড়-বিচুলি তাপ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার পর মাশুরুম বীজ দিয়ে পলিথিন প্যাকেট করা হয়। যেটাকে বলা হয় বল সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডার ঘরের মধ্যে ঝুলিয়ে রেখে পানি স্প্রে করার পরই বের হয় কাঙ্ক্ষিত মাশুরুম। একটি সিলিন্ডার থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত মাশরুম তোলা যায়।
সাইফুল ইসলামের মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই মাশরুম ব্যবহার ও চাষ শুরু করেছেন। ভোক্তা ও মাশরুম চাষে আগ্রহী যুবক তোফায়েল আহম্মেদ জানান, তিনি আগে মাসরুমের গুণাগুণ জানতেন না। পরে জানতে পেরে নিজে ব্যবহার করছেন এবং অন্যদের ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। একই কথা জানান তৌহিদ উদ দৌলা রেজা ও জুরাইস ইসলাম।
পুষ্টিবিদ জান্নাতুন নেছা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাশরুম উচ্চ প্রোটিন-সমৃদ্ধ। সব বয়সের মানুষের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত ভূমিকা রাখে। চর্বি ও মানবদেহে ক্ষতিকারক কিছু নেই। তা ছাড়া রোগ প্রতিরোধী এ মাশরুম আমিষের চাহিদা মেটানোসহ মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী মাশরুম। খাদ্য হিসেবে অনেকেই গ্রহণ করছেন। তাই অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে মাশরুম অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাংনী উপজেলায় সাইফুল ইসলামের মাশরুম চাষে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করাসহ স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সহজে আবাদযোগ্য মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ এখন সময়ের দাবি। বেকারত্ব ঘোচাতে যুবকদের জন্য মাশরুম আবাদ উপযুক্ত মাধ্যম বলে মনে করছেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খা জানান, মাশরুম চাষে ধৈর্য হারালে চলবে না। অনেকেই মাশরুম চাষে ধৈর্য হারিয়ে পিছু হটেন। যারা ধৈর্য ধরে মাশরুম চাষ করেছেন তারা সবাই লাভবান হচ্ছেন। গাংনী সাইফুল ইসলাম তার উদাহরণ। উৎপাদনের পাশাপাশি বাজারজাত করার বিষয়ে আমরাও চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, আগের তুলনায় জেলার মানুষ মাশরুম খাওয়া শুরু করেছেন। তবে উৎপাদন বেশি হলে ভোক্তাও বাড়বে। উৎপাদন ও ভোক্তা তৈরিতে আমরা কাজ করছি। তবে আমরা আশাবাদী যে শিগগির মাশরুমের রমরমা বাজার তৈরি হবে মেহেরপুরে।
এনএ