কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে জাতীয় পরিচয়পত্রে সন্তানের থেকে বাবার বয়স কম হওয়ায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে সমাধান না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান ৯৪ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী।

জানা যায়, উপজেলার চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুলার কুটি গ্রামের মৃত বাবন শেখের ছেলে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। ৪৩ বছর বয়সে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার তিন সন্তানের জন্ম যুদ্ধের আগে। যুদ্ধের পরে আরও দুই সন্তানের জন্ম হয়। ২০০৫ সালের ২১ মে তার নাম গেজেটভুক্ত হয়। ২০০৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০২০ সালে অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য পূরণ করতে গিয়ে জন্ম তারিখের ত্রুটির কারণে ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৯২৮ সালের ১১ আগষ্ট। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ মে। জাতীয় পরিচয়পত্রে বড় ছেলে আমির হোসেনের বয়স দেখানো হয় ১৯৬০ সালের ২ মার্চ। জাতীয় পরিচয়পত্রের এমন ত্রুটির কারণে দুই বছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ রয়েছে। জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন বিভাগে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি আকবর আলীর সন্তানদের। জন্ম তারিখ সংশোধন হওয়ার আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী গত ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী বলেন, আমিসহ আকবর আলী, লস্কর আলী জেঠাতো ভাই। তিনজনই যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ ভোটার আইডির সমস্যা হওয়ায় আকবর আলীর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া বলেন, ভাতা বন্ধ হওয়ার পর থেকে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঠিকমতো চিকিৎসা  করতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে উনি মারা গেলেন। আমরা অফিস-আদালতে অনেক দৌঁড়াইছি। কেউ সাড়া দেয়নি।

বড় ছেলে আমির হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় বাবার বয়স দিছে ১৯৭১ সাল। আমাদের ভাই-বোনদের অনেকের বয়স তুলে দিছে ১৯৫০, ১৯৬০। জন্ম তারিখ ঠিক করার জন্য যেখানেই গেছি খালি ট্যাহা-ট্যাহা করে। তাও আমগো বাবার জন্ম তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা ব্যর্থ হয়া গেছি গা।

নাতি রঞ্জু বলেন, ২০০৮ সালে আমার দাদা-দাদি এনআইডি করতে যায়। সেখানে তাদের বয়স ভুল দেওয়া হয়েছে। বয়স কি এগুলা বোঝে না। দাদার বয়স ঠিক করতে আমরা ঢাকা গেছি। সেখানে বলা হয় আমরা পারব না, এটা রংপুর থেকে ঠিক করবে। রংপুরে গেছি, সেখানে আমরা পাত্তাই পায়নি। বহু টাকা-পয়সা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি। দাদা মারাই গেলেন। তবুও ভাতা চালু হয়নি আজ। এখন অন্যের ভুলের খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। 

সাবেক ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, মরহুম আকবর আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স ঠিক করার জন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন হলো না তার সঠিক কারণ জানি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, সঠিক তদন্ত করে মৃত আকবর আলীর ভাতা পুনরায় চালু করা হোক। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনটি গ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন সাবমিট করা হয়েছে।

রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমি ঢাকায় মিটিং শেষ করে রংপুর ফিরছি। বিষয়টি আমার নজরে এলো। আমি যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করব। 

জুয়েল রানা/এসপি