শহীদ মিনার— ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি সবার মাঝে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয় এটি। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের চিত্রটি ঠিক যেন ভিন্ন।

শুধু মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সময়ে ধোয়ামোছা করেই এক-দুদিনের জন্য রক্ষা করা হয় এই শহীদ মিনারের সম্মান। আর বাকি সময়টা যেন পড়ে থাকে অবহেলায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যেন জুতা পায়েই শহীদ মিনারে বসে আড্ডায় লিপ্ত হয় অনেকেই। বিষয়টি যেন দেখার নেই কেউ।

তবে এবারে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করলেন ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম। হঠাৎ মাঠে এসেই চমকে দিলে সকলকেই। শহীদ মিনারের উপরে জুতা পায়ে বসে আড্ডায় লিপ্ত হওয়া মানুষদের দিয়েই পরিষ্কার করালেন মিনারটি। সেইসঙ্গে মিনারে জুতা পায়ে না উঠা ও শহীদদের সম্মান ক্ষুণ্ন না করার বিষয়ে শপথ পাঠ করালেন তিনি।

শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঠিক এমনি একটি চিত্র চোখে পড়ে। ওসির এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেন জেলা বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

সারেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠে সেখানে আড্ডায় লিপ্ত হওয়ায় মানুষের কাছে গিয়ে তাদের আটকালেন ওসি তানভিরুল ইসলামসহ তার সঙ্গীয় ফোর্স। এরপর তাদের বোঝাতে শুরু করলেন ভাষা আন্দোলনে শহীদদের বিষয়ে। পরে তাদের দ্বারাই পরিষ্কার করালেন মিনারটি। সেইসঙ্গে মিনারটি রক্ষা ও শহীদদের সম্মান রক্ষায় নিজ উদ্যোগে মিনারের চারপাশে বাঁশ দিয়ে ঘেরাও দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন ওসি।

শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছেন ওসি তানভিরুল ইসলাম

বড় মাঠের পাশে কথা হয় পথচারী আকবর আলীর সঙ্গে। তিনি পুলিশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাধ জানিয়ে বলেন, প্রতিদিন বিকেলে মাঠে হাঁটতে আসা হয়। কিন্তু এখানে আসলে একটি জিনিস দেখে খুব কষ্ট হয়। সেটি হল, এই যে তরুণ থেকে শুরু করে অনেক বয়স্করা শহীদ মিনারের উপরে জুতা পায়ে বসে থাকে আড্ডা দেয়। তারা জানেন না যে এই মিনারটির মর্যাদা কী। খুব কষ্টদায়ক বিষয়। মানা করলে অনেকে আবার উল্টো গালাগালি পর্যন্ত করে।

পথচারী জয়নাল আবেদিন বলেন, হঠাৎ করে মাঠে এভাবে থানার ওসিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা এসে একটি চমক দিল। যারা মিনারে বসে আড্ডা দেয় তাদের বুঝিয়ে তাদের দ্বারাই মিনার পরিষ্কার করালেন ও তাদের বুঝালেন শহীদদের মর্যাদা আসলে কী। বিষয়টি সত্যিই খুব ভালো লাগল।

কথা হয় ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই আমার শহীদের সম্মান করব আর বাকি দিনগুলোতে সম্মান করব না; জুতা পায়ে মিনারে উঠব এটা ঠিক নয়। যাদের জন্য আমরা কথা বলতে পারছি, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছি আজ তাদের জন্যই আমরা নিজেকে পরিবর্তন করতে পারব না কেন?

ওসি বলেন, আমি মনে করি শহীদদের অপমান করে জুতা পায়ে মিনারে উঠা মানে একটা জাতিকে অপমান করা। ভাষা আন্দোলনের ব্যাপারে সকলকে জানতে হবে। আমি আজ এসে কিছু মানুষের দ্বারা এটি পরিষ্কার করিয়েছি। এটা তাদের খারাপ লাগতে পারে। তবে তারা জানেন না, তারা কোন মহৎ কাজটি করেছেন।

ওসি তানভিরুল ইসলাম আরও বলেন, শহীদদের অপমান করার অধিকার কারো নেই। আমি এরপর এই শহীদ মিনারের রক্ষার ক্ষেত্রে এখানে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেব। পাশাপাশি চেষ্টা করব, মিনারটির চারপাশে বাঁশ দিয়ে ঘেরাও দেওয়ার। যাতে কেউ মিনারে জুতা পায়ে উঠতে না পারে। এরপরেও যদি কেউ শহীদদের অপমান করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাহিদ রেজা/এমএসআর