দেশি বেগুনের মতোই অটুট স্বাদ, আকারে বড়, ফলনও বেশি। পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। সার ও কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তাও স্বল্প। এই অল্প খরচে দ্বিগুণ উৎপাদিত হচ্ছে নতুন বারি হাইব্রিড-৪ জাতের বেগুন। ফলে ফলনশীল এ জাতের বেগুন আবাদ করে কয়েক বছরেই চাষিরা হচ্ছেন লাভবান।

মেহেরপুর বিএডিসি থেকে বীজ সংগ্রহ করে ও পরামর্শ নিয়ে জেলার চাষিরা এবার চাষ করেছেন বারি হাইব্রিড-৪ বেগুন। এতে দ্বিগুণ উৎপাদন পাচ্ছেন তারা। এ জাতের বেগুন দেশি স্বাদ ও পুষ্টিতেও ভরপুর। প্রতি বিঘায় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানায় বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তবে ক্রেতারাও বলছেন, যদিও এটি হাইব্রিড, তবু এতে রয়েছে দেশি বেগুনের স্বাদ-গন্ধ।

বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, এ জাতের বেগুন চাষে যেমন চাষিরা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ভোক্তারা বিষমুক্ত দেশি বেগুনের স্বাদ পাচ্ছে। সারা বছরই হাইব্রিড-৪ বেগুন আবাদ হওয়ায় অনেক চাষি এ বেগুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম নিজ জমিতে দেশি বেগুনের আবাদ করতেন এত দিন। একদিকে পোকামাকড় ও পাখির আক্রমণ, অন্যদিকে ওজনে হতো কম। খরচ বাদ দিয়ে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ত তার জন্য।

মেহেরপুর বিএডিসির বীজ প্রত্যয়ন বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী শফিকুল গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে হাইব্রিড-৪ জাতের বেগুন আবাদ করেছিলেন গত বছর। ছয় মাস ধরে তিনি তার জমি থেকে বেগুন সংগ্রহ করছেন। এক বিঘা জমিতে ৬ মাসে ৫ থেকে ৬ টন বেগুন বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করেছেন। চলতি বছরও তিনি দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড-৪ আবাদ করেছেন। তার বেগুনখেতের প্রতিটি গাছে এখন ঝুলছে বেগুন। একেকটি বেগুনের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি।

শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ বছর হাইব্রিড-৪ জাতের বেগুনের আবাদ করেছি। আগামী ছয় মাস ধরে বেগুন সংগ্রহ করব জমি থেকে। দুই বিঘা জমিতে অন্তত ১১ থেকে ১২ টন বেগুন পাব বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বেগুনের চেয়ে দেখতে সুন্দর, মসৃণ ও স্বাদ হওয়ায় সবার আগে আমার বেগুন বিক্রি হয়ে যায়। দামও ভালো আসে। 

তা ছাড়া বাইরের জেলার পাইকাররা এসে আমার বেগুন কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বেগুন বাজারে খুচরা বিক্রি হয় ৩ থেকে ৪০ টাকা। পাইকারি বিক্রি করি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আমাদের মাঠে আমার দেখাদেখি এবার সবাই এ জাতের বেগুনের আবাদ করেছে।

মেহেরপুর সদরের চাঁদবিল গ্রামের কৃষক আবু সিদ্দিক জানান, তিনি ইতোপূর্বে ইসলামপুরি ও কটকটি জাতের বেগুনের আবাদ করতেন। বেগুন বাজারজাত করতে একটু দেরি হলে বোঁটা পচে যেত। পাখি ও পোকার আক্রমণ অনেক বেশি এ বেগুনে। গাছে পরিমাণে বেশি ধরলেও ওজনে কম। এ বছর হাইব্রিড-৪ জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। একেকটি বেগুনের ওজন হয়েছে এক থেকে দেড় কেজি। আমাদের মতো অনেকেই এ বছর এ জাতের বেগুনের আবাদ করে লাভ পাচ্ছেন দ্বিগুণ।

মেহেরপুর সবজি বীজ উৎপাদনকারী (বিএডিসি) প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক নাহিদুল ইসলাম বলেন, হাইব্রিড জাতের ফসল ভেবে অনেকেই অনিহা দেখান। হাইব্রিড জাতের অনেক সবজি ফসলেরই স্বাদ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। বারি হাইব্রিড-৪ বেগুন আকারে অনেক বড়, স্বাদ বেশি। আমরা বীজ উৎপাদনের জন্য দুই একর জমিতে বেগুনের আবাদ করেছি। বর্তমানের এ জাতের বেগুনে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। কীটনাশকের প্রয়োজন নেই। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারই যথেষ্ট।

বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক বিঘা জমিতে ১০ কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি কেজি বারি হাইব্রিড-৪ বেগুনের বীজ বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বেগুনের দর বাজারে কম থাকলেও বীজ বিক্রি করেও কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন। কৃষকদের লাভবান হওয়ার জন্য আমাদের পরামর্শ ও বীজ দিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুর জেলার আবাদি জমির সবই সবজি চাষের জন্য উপযোগী। সবজি এ জেলার একমাত্র অর্থকরী ফসল। এত দিন ইসলামপুরি ও কটকটি জাতের বেগুন আবাদ করতেন জেলার কৃষকরা।

তিনি আরও বলেন, এ বছর অধিকাংশ কৃষকই এ বছর বারি হাইব্রিড-৪ জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। ৩৬০ হেক্টর জমিতে এ বেগুন আবাদ হয়েছে। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে এ বেগুন সংগ্রহ করবেন কৃষক। এতে লাভবান হবেন তারা।

এনএ