রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সংকটে নির্মাণ শিল্প
চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমদানিকৃত সকল নির্মাণ মালামালের ও যন্ত্রপাতির মূল্য আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে যেখানে স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরার দাম ছিল প্রতি টন ৫৭০ ডলার। যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫০ থেকে ৭০০ ডলারে। টনপ্রতি রডের দাম ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে।
নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের দাবি, পাশাপাশি সিমেন্ট, পাথর, ইট, বিটুমিন, ডিজেল, অ্যালুমিনিয়াম, বিল্ডিং ফিনিশিং আইটেম ইত্যাদি দ্রব্যসহ প্রায় সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আবাসন খাত কিংবা নির্মাণ শিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে। সরকারের নজরদারিসহ বাড়তি পদক্ষেপ না নিলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন সংকটে পড়বে বলে মনে করেন তারা।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটন রডের বর্তমান মূল্য ৯০ হাজার ৯৫ হাজার টাকা। যা ২০২১ সালে এই সময় ছিল ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ শতকরা বৃদ্ধির হার ৬০ শতাংশের অধিক। পানি সরবরাহ, পয়নিষ্কাশন, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল দ্রব্য সমূহের মূল্য ৪০ থেকে ৯৪ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেলের মূল্য ৬৫ টাকার স্থলে বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ টাকা হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন ও যন্ত্রপাতি চালনার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমদানিকৃত সকল নির্মাণ মালামালের ও যন্ত্রপাতির মূল্যও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া চলমান করোনার নেতিবাচক প্রভাব আগে থেকেই চলমান।
এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি আবাসন শিল্পে আবারও কালো ছায়া তৈরি করেছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে আগামীতে ফ্ল্যাটের দাম বৃদ্ধি পাবে যা মধ্যবিত্তের আওতার বাহিরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনা প্রশ্নে অর্থ বিনিয়োগ, সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা প্রচলন ও একটি বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে বাংলাদেশ ঠিকাদার ঐক্য পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বেশ কিছু দাবি তুলে বলেন, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়ক হিসাবে ঠিকাদাররা সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন সময়মত বাস্তবায়ন না হলে দেশের উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। করোনার কারণে আমরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন। বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণ প্রকল্পের মূল উপকরণগুলো যেমন- লৌহ ও লৌহ জাতীয় দ্রব্য, সিমেন্ট, পাথর, ইট, বিটুমিন, ডিজেল, অ্যালুমিনিয়াম, বিল্ডিং ফিনিশিং আইটেম ইত্যাদি দ্রব্যাদিসহ এ খাতের প্রায় সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিক ও লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়ে অসহনীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দামের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতিতে ঠিকাদাররা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা চলমান প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে পারছি না। নতুন কোনো দরপত্রেও অংশগ্রহণের সাহস পাচ্ছি না। এ অবস্থায় চলমান অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির সঙ্গে মূল্য সমন্বয় না করলে সকল নির্মাণ কাজে স্থবিরতা দেখা দেবে এবং প্রকল্প অসম্ভব হয়ে পড়বে।
চলমান সরকারি বিভিন্ন কাজের মূল্য সমন্বয় ও নতুন রেট পাসের দাবি জানিয়েছে ঠিকাদার ঐক্য পরিষদ। তাদের দাবি, আমদানি নির্ভর নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামালের আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে হলেও স্থগিত করা ও বর্তমান আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৭ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ ও সাড়ে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ করা। অন্যদিকে রিহ্যাব দাবি করেছে, আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদশির্ত অর্থ বিনিয়োগের পাশাপাশি বিশেষ তহবিল গঠনের।
আরএম/ওএফ