পোশাক শ্রমিকদের ঈদুল ফিতরের বোনাস দেওয়া শুরু করেছেন কারাখানা মালিকরা। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) থেকে বোনাসের পাশাপাশি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বেতনও দিচ্ছে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ইএবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যবসায়ী মালিকরা জানান, আজ থেকে কিছু কারখানায় বোনাস ও বেতন দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বোনাসের পাশাপাশি ন্যূনতম এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনের বেতন দেবে। শ্রমিক নেতাদের দাবি ছিল ২০ রোজার মধ্যে বেতন ও বোনাস পরিশোধ করার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, দেশে বর্তমানে চার হাজার রফতানিমুখী কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৪০-৫০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। আজ আরও ১০০-১৫০ কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হবে। এর মধ্যে কেউ কেউ বেতন আবার কেউ কেউ বোনাস দিচ্ছেন।

প্রায় চার হাজার পোশাক কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৭৩৫টি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য।

তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর আমরা ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করছি। এবারও যাতে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুন্দরভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, কারখানাগুলোতে বেতন ও বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটির আগেই সবাই বেতন-বোনাস পেয়ে যাবেন।

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ থেকে বেতন বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো মার্চের বেতন দিতে পারেনি তারাও সরকার নির্ধারিত সময়ে মধ্যে বেতন বোনাস দেবে।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের আনন্দ আমাদের সবার। সবাই যাতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিচ্ছি। তারা যাতে আগে পরে করে বাড়ি যেতে পারে সেভাবে ছুটি দেওয়ার কথাও চিন্তা করছি।

একই কথা বলেন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, আজ থেকে আমাদের কিছু কারখানায় বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সবাইকে বেতন ও বোনাস দেওয়া হবে। 

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকনও একই কথা জানান।

এদিকে ঈদের আগে বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন শ্রমিক নেতারা। তারা ২০ রোজার মধ্যে বোনাস ও ঈদের ছুটির আগে অর্থাৎ ২৮ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।

কারখানা মালিকদের দ্রুত বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে করে সরকারের কাছে সঠিক সময়ে বকেয়া পরিশোধ দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। শ্রমিকদের নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত বেতন-বোনাস পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, ২৫ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে হবে। কারণ শ্রমিকরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে অনেক কষ্টে দিন পার করছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি মীর আবুল কালাম আজাদ বলেন, তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস ২০ রমজানের মধ্যে দিতে হবে। ২০ রোজার মধ্যে দেওয়া হলে ঈদের আগের শ্রমিকরা সময় নিয়ে পছন্দ মতো পোশাক ও জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।

শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, ২০ রমজানের আগেই অর্থাৎ ২২ এপ্রিলের আগেই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দিতে হবে। এতে তারা নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে পারবেন। আবার ২৭ রমজানের আগেই এপ্রিল মাসের ন্যূনতম ১৫ দিনের বেতন দিতে হবে। এটা করতে পারলে শ্রমিকরা পরিবারের সঙ্গে গ্রামে উৎসব পালন করতে পারবেন।

এমআই/ওএফ