বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলকে (ইফাদ) আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি)  ইফাদ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ও ক্ষমতায়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর সহায়তায় সহজ শর্তে ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিতে ইফাদ প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য জিইএফ, জিসিএফ এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী তহবিল থেকে বাংলাদেশে অর্থায়নের জন্যও অনুরোধ করেন। ঢাকাস্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি অফিসের সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত জনবল বাড়িয়ে বাংলাদেশে ইফাদের প্রকল্প সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে অবহিত করেন।

ইফাদ প্রেসিডেন্ট আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী গড়তে বাংলাদেশকে পাশে থাকার আহ্বান জানান। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) গোল-১ এবং গোল-২ এর অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, ইফাদের গৃহীত কার্যক্রমের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, জেন্ডার, পুষ্টি, আদিবাসী  জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

ইফাদের কারিগরি জ্ঞান, উদ্ভাবনী চিন্তা ও অভিজ্ঞতার আলোকে দরিদ্র, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের কাজে লাগিয়ে কৃষি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ টেকসই উন্নয়নের লক্ষে ১২তম পরিপূরণে বাংলাদেশের চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা কামনা করেন প্রেসিডেন্ট। ১২তম পরিপূরণ বাস্তবায়নে আগামী তিন বছরে (২০২২ হতে ২০২৪ সাল) মোট ঋণ ও অনুদান বাবদ ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রেক্ষাপটে ইফাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহে সদস্য দেশগুলোকে চাঁদা বৃদ্ধির অনুরোধ করেন তিনি।

ইফাদ প্রেসিডেন্টের এমন প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইফাদের মোট ১১টি পরিপূরণে চাঁদা দিয়েছে। ১২তম পরিপূরণে বাংলাদেশের চাঁদার পরিমাণ ১১তম পরিপূরণের তুলনায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির আশ্বাস দেন এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।

এসময় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য ইফাদের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানান। নতুন মেয়াদে আগামী চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্টকে পুনঃনির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় বাংলাদেশ সরকারের আট সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। সদস্যরা হলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সমন্বয় ও নরডিক অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এবং ইকোনমিক কাউন্সিলর অংশগ্রহণ করেন।
১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ইফাদের ৪৪তম গভর্নিং কাউন্সিল এর ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর গভর্নিং কাউন্সিলের সভা ইতালির রোমে ইফাদের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু এবারই কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রথম ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ)  সদস্যপদ প্রাপ্তির পর থেকে বাংলাদেশে ইফাদের মোট ক্রমপুঞ্জিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য ইফাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইফাদ এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৪টি প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিয়েছে। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি তথা ১১ দশমিক ৭ মিলিয়ন পরিবার উপকৃত হয়েছে। ৩৪টি প্রকল্পের মধ্যে ২৭টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে এবং বাকি ৭টি প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এসআর/ আরএইচ