বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি) ইভ্যালিকে শর্তযুক্ত বিক্রয় বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশটি আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর পাশাপাশি চূড়ান্ত নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন (সিনিয়র সচিব) মো. মফিজুল ইসলাম।

বিসিসির চেয়ারপারসন ঢাকা পোস্টকে বলেন, “ইভ্যালি ‘ঈদ ধামাকায়’ ১৫০ শতাংশ ছাড়ের যে অফারটি দিয়েছিল, যেখানে ৬০ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ সমন্বয়ের শর্ত ছিল। ইভ্যালির এটি একটি শর্তযুক্ত বিক্রয়। যেটি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ৫ এর ৩ এর ক ধারায় এটি অপরাধ। এজন্য এটি আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শর্তযুক্ত বিক্রি বন্ধ করার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন থেকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে এরকম ধামাকা অফার দিয়ে তারা এটা করতে পারবেন না। চূড়ান্ত আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ মানতে হবে ইভ্যালিকে।’’

মার্কেটে যারা প্রতিযোগিতা নষ্ট করছে তাদের বিষয়ে বিষয়ে আপনার বার্তা কি এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারপারসন বলেন, ‘যেহেতু শর্তযুক্ত আইনে আমাদের শর্তযুক্ত বিক্রয় নিষিদ্ধ আছে, সেজন্য এটি কেউ করতে পারবে না। যদি কেউ করে তাহলে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’

এর আগে গত বছর ঈদে পরপর বাজারে ব্যবসার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে একচেটিয়া (মনোপলি) অবস্থার সৃষ্টি করছে ইভ্যালি, যা আইনের বরখেলাপ উল্লেখ করে চিঠি দেয় প্রতিযোগিতা কমিশন। ওই চিঠিতে প্রতিযোগিতা কমিশন চিঠিতে উল্লেখ করে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি অফার সম্প্রতি নজরে আসে।

এ অফারে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে। যার পরিমাণ ৮০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত। সাধারণত এ ধরনের অফার ভোক্তাকে কম মূল্যে পণ্য কিনতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু এ অফারের শর্তাবলির ৪ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে ‘ঈদ ধামাকা ক্যাম্পেইনে পার্শিয়াল পেমেন্ট অ্যালাউড না, ফুল পেমেন্ট করতে হবে। ক্যাশব্যাক ইভ্যালি ব্যালেন্সে যোগ হবে, পেমেন্ট করার তিনদিন পর। এই ক্যাশব্যাক পরবর্তী সময়ে ইভ্যালিতে যে কোনো রেগুলার শপ থেকে কেনাকাটায় ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রোডাক্টের ৬০ শতাংশ ব্যালেন্স থেকে ও ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করতে হবে।’

প্রতিযোগিতা কমিশন মনে করে, ইভ্যালির অফারের শর্তের কারণে এটি প্রচলিত ডিসকাউন্ট/ক্যাশব্যাক/লয়ালটি রিবেট না হয়ে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ১৫ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী শর্তযুক্ত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইভ্যালির ক্যাশব্যাক অফারের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা বিস্তারের কারণ ঘটছে বা বাজারে মনোপলি অবস্থার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কিছু তথ্যাদি পত্র প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে প্রদানের জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতা কমিশন ইভ্যালির কাছে যেসব তথ্যাদি চেয়েছিল তা হচ্ছে- কোম্পানির বিস্তারিত বিবরণ, ইভ্যালির বার্ষিক টার্নওভার ও আয়-ব্যয়ের তথ্য (বিগত তিন বছরের অথবা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত)। ইভ্যালির আওতাভুক্ত পণ্যসমূহের বিবরণ, ইভ্যালির পণ্যের ভৌগোলিক সীমানার বিবরণ (বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বহির্বিশ্বে)। ইভ্যালির মাধ্যমে যেসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাদের তালিকা ও ব্যবসায়িক লেনদেনের পদ্ধতি ও শর্তাবলি। ৮০-১৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে কীভাবে ব্যবসা করছে তার তথ্য। ইভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের সঙ্গে অন্যান্য অফারের পার্থক্য কী (বিস্তারিত বিবরণসহ)। ঈদ ধামাকা অফার সময়ের আগের তিন মাসের বিক্রি, আয় ও মুনাফার সঙ্গে অফার চলাকালীন বিক্রি, আয় ও মুনাফার তুলনামূলক বিবরণী।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৪ মে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেয় ইভ্যালি ডটকম লিমিটেড। এর অনুমোদিত মূলধন পাঁচ লাখ টাকা। ১০ টাকা মূল্যমানের এক হাজার শেয়ারের মালিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল। চার হাজার শেয়ারের মালিক তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল আর শামীমা নাসরিন দিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।

এসআর/ওএফ