রবি আজিয়াটা লিমিটেড শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তবে কবে দেওয়া হবে তা বলা মুশকিল বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ‘নো’ ডিভিডেন্ড দেওয়ার ঘোষণা দেয় রবি। ওই ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। জরুরি ভিত্তিতে কোম্পানিটিকে তলব করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে রবি। 

সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানিটির সিইও বলেন, কম লভ্যাংশ দিয়ে কাউকে খুশি করা যাবে না। তিনি বলেন, আমাদের বোর্ড অবশ্যই লভ্যাংশ দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সঠিক সময়, সঠিক মুহূর্তে এটা করতে চাচ্ছি। কত তাড়াতাড়ি হবে, সে কথা বলা মুশকিল। কারণ এটা বোর্ডের ব্যাপার।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের যে ডিভিডেন্ড পলিসি আছে, তাতে ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলে এটা মাত্র ১ দশমিক ৬ অথবা ১ দশমিক ৭ শতাংশ আসত। এমনকি শতভাগ লভ্যাংশ দিলেও ৩ শতাংশের মত আসে। এত কম লভ্যাংশ দিয়ে কোনো পজিটিভ ইমপ্যাক্ট (ইতিবাচক প্রভাব) ফেলা যেত কি না, দ্যাট ওয়াজ ওয়ান অব দ্যা ক্রিটিক্যাল কনসার্ন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনা মহামারি সত্ত্বেও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রবির রাজস্ব বাড়ার হার ১ দশমিক ১ শতাংশ। চতুর্থ প্রান্তিকে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকাসহ এ বছর রবির মোট আয় ৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এ প্রান্তিকের ৩৯ কোটি টাকাসহ ২০২০ সালে রবির কর পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৫৫ কোটি টাকায়। আগের বছরের নামমাত্র মুনাফার পর এ অর্জন আশাব্যঞ্জক।

তবে প্রবৃদ্ধির গতিতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে মোট আয়ের ওপর নূন্যতম ২ শতাংশ কর। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমাত্র রবিই কোনো প্রণোদনা ছাড়া পুঁজিবাজারে প্রবেশ করেছে। তাই ২০২০ সালে কার্যকর করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশে। সুতরাং এটি স্পষ্ট যে কোম্পানিটি করের বোঝায় জর্জরিত।

নতুন ১৯ লাখ গ্রাহকসহ ২০২০ সালে রবির সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯ লাখে। যার মধ্যে ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গত বছরের তুলনায় ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ।

পারিপার্শ্বিক কারণে ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে ভয়েস সেবা থেকে রাজস্বের হার ১ শতাংশ কমেছে। যার ফলে গত প্রান্তিক থেকে এ প্রান্তিকে রাজস্ব কমেছে দশমিক ৭ শতাংশ। আগের বছরের (২০১৯) তুলনায় রবির ভয়েস সেবায় রাজস্বের হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। যা ভয়েস কল করার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতার প্রতিফলন। অন্যদিকে ডাটা সেবায় রাজস্ব তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ১ শতাংশ এবং গত বছরের (২০১৯) তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

গত প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। তবে পুরো বছরের বিবেচনায় ইবিআইটিডিএ ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। চতুর্থ প্রান্তিকে ইবিআইটিডিএ মার্জিন ছিল ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা তৃতীয় প্রান্তিকের  তুলনায় ১ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট (পিপি) কম। ২০২০ সালের ইবিআইটিডিএ মার্জিন হলো ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১৯ সাল থেকে ৪ দশমিক ১ পিপি বেশি।

২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা ওই প্রান্তিকের মোট রাজস্বের ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মোট ৪ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছে রবি যা ওই বছরের মোট রাজস্বের ৫৬ শতাংশ।

চতুর্থ প্রান্তিকে ৬৫৭ কোটি টাকা মূলধনী বিনিয়োগসহ ২০২০ সালে রবির মোট মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে ওই বছর ৪ হাজার ২৬৩টির বেশি ফোরজি সাইট স্থাপন করেছে রবি। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ রবির নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৬১টিতে, যার মধ্যে ৯৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ফোরজি সাইট।

কোম্পানির বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও ভবিষ্যত অগ্রগতির লক্ষ্যে মূলধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২০ সালের শেয়ারের ওপর কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি রবি’র পরিচালনা পর্ষদ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কোম্পানিটি জানিয়েছে।

এমআই/এসএসএইচ