সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের পর রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি)  প্রতিক্রিয়া জানানোর ভার্চুয়াল সভায় সাংবাদিকদের কাছে এ শঙ্কার কথা জানান তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সারাবিশ্বের সঙ্গে বর্তমানে যে বাণিজ্যিক সুবিধাগুলো রয়েছে, সেগুলো থাকবে না। ফলে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগ বাড়তে হবে। পাশাপাশি বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার বাড়াতে হবে। যাতে তারা ধীরে ধীরে সুবিধাগুলো প্রত্যাহার করে।

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের বৈষম্য কমাতে হবে। নাগরিক অধিকার ও মানবিক অধিকার রক্ষায় কাজ করতে হবে। এখন নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের কাছ থেকে বেশি সুবিধা আনতে হবে-এমনকি মানসিকতার পরিবর্তন করে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করতে হবে। দাঁড়াতে হবে নিজেদের পায়ে। এ জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। জোর দিতে হবে কর আহরণে, মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা, ব্যক্তিবিনিয়োগ ও নতুন নতুন কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পাঁচটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলা হয় সিপিডির পক্ষ থেকে। বিষয়গুলো হচ্ছে- অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন থেকে বের হয়ে আসা। এলডিসি উত্তরণে পরবর্তী যে কৌশলপত্র তৈরি করা হবে তাতে এসব বিষয় যুক্ত করার কথা জানান তিনি।

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ভুটান এরইমধ্যে কৌশল তৈরি করেছে -এ কথা জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের তো কৌশলপত্রের অভাব নেই। এসবের মধ্যেও এলডিসি উত্তরণকালীন কৌশল কিভাবে তৈরি করা যায়, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে।

এ কৌশলপত্র তৈরিতে ২০১৬ সালে গঠন করা জাতীয় টাস্কফোর্সকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি জানান, টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করতে হবে। এতে বাণিজ্য, ইআরডি, পরিকল্পনা কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

এমআই/আরএইচ