উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে চলছে দেশ। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি -এই চার মূল ভিত্তি সামনে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। 

বাংলাদেশ একমাত্র দেশ হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ৩টি মানদণ্ডই পূরণ করেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্ল্যানারি সভায় এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়। 

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য পাঁচ বছর প্রস্তুতির সময় থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফলে সঙ্গত কারণেই এ বছরের বাজেটই হতে পারে স্বল্পোন্নত দেশের শেষ বাজেট, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক পেশকৃত ২৩ তম অর্থনৈতিক দলিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় বলেছেন, এবারের বিশাল বাজেটকে (২০২৩-২৪) অনেকেই মনে করছেন ভোটের বাজেট। তবে আগামী ২০২৪-২৫ এর বাজেট হবে উন্নয়নের রোল মডেলখ্যাত উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রথম বাজেট। তবে কারও মতে, এটি উন্নয়নশীল দেশে পা রাখা বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও টেক-অফ অর্থনৈতিক মূলভিত্তির এক অনন্য দলিল। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের তাগিদ থেকে প্রারম্ভিক যাত্রার সোপান এটি। এ বাজেট এমনিতেই বেশকিছু চাপকে বিবেচনায় রেখে প্রণীত। একদিকে আইএমএফ এর শর্ত পূরণ, অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের সন্তুষ্টি ও স্বাচ্ছন্দ্য। বাংলাদেশের ডলার সংকট কাটাতে আইএমএফ প্রদত্ত  ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের শর্তের প্রতিফলন ঘটবে এ বাজেটে।

তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতের সংস্কার, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, কৃষি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমানোর ন্যায় বেশকিছু বিষয়কে মাথায় রেখে এ বাজেট। তারপরও যেহেতু সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাই আবারও জনগণের সমর্থন পেতে বাজেটকে একটি জনকল্যাণমুখী আর্থসামাজিক দলিল হিসেবে প্রণয়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নামিয়ে সহনীয় মাত্রায় রাখার বিধান থাকবে অর্থমন্ত্রীর পেশকৃত এ বাজেটে। করোনা অতিমারির ধকল কাটাতে সমাজের নিম্নবিত্তদের জন্য সম্প্রসারিত হওয়া টিসিবির সুলভ মূল্য কার্ড ও ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচির আওতাও বাড়ানো হবে। এছাড়া করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, করপোরেট কর না বাড়ানো, সরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি থাকছে এ অর্থনৈতিক দলিলে। বিপুল অংকের এ বাজেটের অর্থায়ন ঠিক রাখতে টিআইএনধারী নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকেও ন্যূনতম কর দিতে হবে বলে বিধান আসছে বলে জানা যায়। 

সংকট সত্ত্বেও উচ্চতর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সামনে রেখে এই বাজেট পরিকল্পনা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এ বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির মাত্রা সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে রাখার ঘোষণাও আসছে আজ। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। আজকের প্রস্তাবিত বাজেট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। গত ৫২ বছরের ব্যবধানে যদিও মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ, অন্যদিকে বাজেটের আকার বেড়েছে ১০০ গুণ।

অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এবারের বাজেটের মূল দর্শন হলো ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এর ধারাবাহিকতায় স্মার্ট বাংলাদেশ ৪টি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি।

এমএম/এসএম