কারওয়ান বাজারের দোকানগুলোতে ‘ঠাঁই নাই’ অবস্থা
রাজধানীর মগবাজার এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান। রমজান মাসকে সামনে রেখে দোকানের জন্য মালামাল কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আরও দিনদুয়েক পর বাজারে আসার সিদ্ধান্ত ছিল হাবিবুরের।
কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের খবরে অনেকটা হন্য হয়েই কারওয়ান বাজারে এসেছেন। তবে বাজারে ক্রেতার ভিড়ে কাঙ্ক্ষিত মালামাল না কিনেই তাকে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
হাবিবের সঙ্গে কারওয়ান বাজারের মোড়ে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ টিভিতে লকডাউনের খবর শুনে বাজারে আসছি। কিন্তু এত মানুষ যে, সব বাজার করার সুযোগই পেলাম না। রোজার সময় মুড়ি দরকার, কিন্তু মুড়ির দোকানে গিয়ে পেলাম না, ছোলা-খেজুরও মানুষের চাহিদা আর ভিড়ের কারণে পরিমাণ মতো পেলাম না।’
হাবিবুরের সঙ্গে কথা শেষ করে সামনে পা বাড়াতেই দেখা যায়, এক নারী অনেকগুলো ব্যাগে বাজার রিকশায় তুলছেন। সেখানে কথা হলে শেফালি নামের ওই নারী জানান, লকডাউনের খবরে তিনি কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন।
বিজ্ঞাপন
দেশে গত কয়েকদিন থেকে করোনাভাইরাসে মৃত্যু শনাক্তের পরিমাণ হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে শনিবার (৩ এপ্রিল) সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে দেশ লকডাউনে যাচ্ছে বলে জানান। এ খবরের ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের লকডাউনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। দুই মন্ত্রীর লকডাউনের খবরে বিকেলের পর থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে।
শনিবার সন্ধ্যার আগ থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় কাওরান বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ভিড় করছেন; মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ মানুষকেই পরিমাণের তুলনায় বাড়তি বাজার করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মুড়ি, খেজুর, তেল ও আলু বেশি পরিমাণে কিনতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের চালের পাইকারি ব্যবসায়ী বাদশা মিঞা ঢাকা পোস্টকে জানান, বিকেলের পর থেকে বাজারে বাড়তি মানুষ আসতে শুরু করে। অনেক ক্রেতা বেশি পরিমাণে চাল নিচ্ছেন, তবে চাহিদা বাড়লেও এখনও গতকালের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এক ব্যক্তিকে লম্বা ফর্দ থেকে একে একে দ্রব্যসামগ্রী ব্যাগে পুরতে দেখা যায়। বেশি পরিমাণে বাজার করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনছেন না, সরকার লকডাউন দিতেছে। বাজার না করে রাখলে দুই-একদিন পর দাম বেড়ে যাবে।
এই ক্রেতার সঙ্গে আলাপ শেষ করে দোকানির সঙ্গে কথার বলার চেষ্টা করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ব্যস্ততার মধ্যে কথা বলবেন সেই সময় নেই। সুমন নামের এই দোকানি জানান, আসরের নামাজের পর থেকে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বাসা থেকে নিজের ছেলেকেও ডেকে এনেছেন।
কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, যে পরিমাণ মালামাল মজুদ রয়েছে লকডাউনে খুব একটা ঝামেলা হবে না। সঙ্গে নতুন করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ারও সম্ভাবনা খুব একটা দেখছেন না তারা। তবে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক জিনিসপত্রে গত কয়েকদিনের তুলনায় এক থেকে দুই টাকা করে বেড়েছে।
এনআই/আরএইচ