ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও ছাঁটাই আতঙ্কে পোশাক শ্রমিকরা
কর্মস্থলে সম্ভব হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি মানা। যাতায়াতে নেই বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। ফলে কঠোর বিধিনিষেধে করোনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন পােশাক শ্রমিকরা। এর মধ্যেও অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে। এতে সবসময় ছাঁটাই আতঙ্ক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তাই কর্মস্থলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত, যাতায়াত ও ঝুঁকি ভাতা প্রদান এবং কর্মী ছাঁটাই বন্ধসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা।
সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মান্ত্রণালয়ে এসব দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন ‘সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন’। সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, মালিকদের অনুরােধে শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলােচনা ছাড়াই পােশাক কারখানা ‘লকডাউন’ এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু কারখানার মালিকরা সরকারের বিধিনিষেধ মানছেন না। শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাই এ বিষয় নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার (১৯ এপ্রিল) শ্রম ও কর্মসংস্থান মান্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়েছি।
চিঠিতে বলা হয়, করােনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ১৩ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। মালিকদের অনুরােধে শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলােচনা ছাড়াই পােশাক কারখানা ‘লকডাউন’ এর আওতামুক্ত রাখা হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রজ্ঞাপনের ৪ নম্বর নির্দেশনায় শিল্প-কারখানাগুলােয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চালু রাখা ও শ্রমিকদের যাতায়াতে প্রতিষ্ঠানকে গাড়ি সরবরাহ করতে বলা হয়। বাস্তবে তা হয়নি। ১৪ এপ্রিল থেকে বেশির ভাগ কারখানায় প্রায় চারগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে শ্রমিকদের যাতায়াত করতে বাধ্য করা হয়। কারখানার যাতায়াত, কর্মস্থলে শ্রমিকদের প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ কারখানায় তিন ফুট দূরত্বও মানা হচ্ছে না। কিছু কিছু কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে।
৬ দফা দাবি
১. স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা না করলে শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত যাতায়াত ভাতা ঘােষণা করতে হবে।
২. কর্মস্থলে শ্রমিকদের প্রবেশ-বের হওয়ার সময় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও কাজের স্থানে ৩ ফুট দূরত্ব কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রয়ােজনীয় পরিদর্শন বা মনিটরিং করতে হবে। কারখানাগুলােয় পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স সেবা প্রদান করছে না এবং সব কারখানায় আইসােলেশন ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. কঠোর ‘লকডাউন’ চলাকালে যে সব শ্রমিক ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় কাজ করছেন তাদের ঝুঁকি ভাতা দিতে হবে।
৪. পােশাক শ্রমিকদের জন্য করােনাভাইরাস প্রতিরােধে টিকা প্রদান করতে হবে।
৫. এই মুহূর্তে কোনো কারখানা লে-অফ বা শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এখনাে কিছু কারখানা মার্চ মাসের মজুরি প্রদান করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের নির্দেশ দিতে হবে।
৬. সব শ্রমিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানানো হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক রফতানিকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকটি কারণে আমরা কারখানা খোলা রাখার দাবি করেছিলাম। এর মধ্যে অন্যতম ছিল; কারখানা বন্ধ করে দিলে একসঙ্গে এতো শ্রমিক গ্রামে চলে যাবেন। এতে গ্রামে করোনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। বেশিরভাগ শ্রমিক কারখানার আশেপাশের এলাকায় বসবাস করেন। আবার কিছু কারখানা শ্রমিকদের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা করেছে। তারপরও কিছু শ্রমিক দূরে থাকার কারণে সমস্যায় পড়েছেন; আমরা ওইসব কারখানাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। শ্রমিক ছাঁটাই যেন না করে এটাও বলা আছে, পাশাপাশি মার্চের বকেয়া বেতন যেসব কারখানা এখনো দেয়নি সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
এসআই/এসকেডি