চাল আমদানিতে সরকারের অনুমতি

বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও দুই লাখ ২৫ হাজার টন চাল আমদানির জন্য ১৯ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি অনুমতির চিঠি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যাচাই-বাছাই করে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ ভাঙা দানাবিশিষ্ট বাসমতি নয়, এমন সেদ্ধ চাল শর্তসাপেক্ষে আমদানি করা যাবে।

এর মধ্যে যশোরের মেসার্স মজুমদার অ্যান্ড সন্স ২০ হাজার টন, মেসার্স লিটন এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, মেসার্স সুশান্ত কৃষ্ণ রায় ১০ হাজার টন, মেসার্স গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজ পাঁচ হাজার টন, সাতক্ষীরার মেসার্স মজুমদার এন্টারপ্রাইজ ২৫ হাজার টন, ময়মনসিংহের মেসার্স মজুমদার ট্রেডার্স ৫০ হাজার টন, গাইবান্ধার মেসার্স প্রধান ট্রেডার্স পাঁচ হাজার টন, পাবনার  পূর্বাশা ট্রেডিং পাঁচ হাজার টন, দিনাজপুরের মেসার্স ইউনাইটেড রাইস মিল পাঁচ হাজার টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স ১০ হাজার টন, মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স পাঁচ হাজার টন এবং মেসার্স নবাব ফুড প্রোডাক্টস ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে। 

এছাড়াও শেরপুরের মেসার্স এবি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ১০ হাজার টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স নজরুল সুপার রাইস মিল ১০ হাজার টন, সাতক্ষীরার মেসার্স নিশাত ইন্টারন্যাশনাল ১৫ হাজার টন, চট্টগ্রামের আল আমিন এস্টাব্লিশমেন্ট পাঁচ হাজার টন, মেসার্স সামছুল আলম ১০ হাজার টন, মেসার্স এস অ্যান্ড কোং ১০ হাজার টন, বগুড়ার ফারিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল পাঁচ হাজার টন চাল আমদানি করতে পারবে।

চাল আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, এই বরাদ্দপত্র ইস্যুর সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা পাঁচ হাজার টন বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ চাল এবং ২০ দিনের মধ্যে পুরোটাই দেশে বাজারজাত করতে হবে।

এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান ১০ থেকে ৫০ হাজার টন বরাদ্দ পেয়েছে তাদের এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে অর্ধেক এবং ৩০ দিনের মধ্যে সব চাল স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করতে হবে বলেও মন্ত্রণালয় থেকে শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, ১০ প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ পাঁচ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এর মধ্যে জয়পুরহাটের হেনা এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, দিনাজপুরের রেনু কনস্ট্রাকশন ১৫ হাজার টন, খুলনার কাজী সোবহান ট্রেডিং করপোরেশন ১০ হাজার টন, বগুড়ার আলাল এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস ১০ হাজার ও আলাল এন্টারপ্রাইজ পাঁচ হাজার টন, নওগাঁর দীপ্ত এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, আকাশ এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, ঘোষ অটোমেটিক রাইস মিল ১৫ হাজার টন, মেসার্স নুরুল ইসলাম ১০ হাজার টন ও জগদীশ চন্দ্র রায় ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে।

এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিল সরকার।

দেশের বাজারে চিকন চালের দাম এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) তিন হাজার ২০০ টাকা থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। খুচরায় প্রতি কেজি সরু চালের দাম পড়ছে ৬৪ টাকা থেকে ৬৬ টাকার মধ্যে। সরু চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঝারি ও মোটা চালের দামও বেড়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির শুল্ক কমিয়েছে সরকার। চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

গত ২৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, চালের দাম নিয়ে ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয়, আবার কৃষকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেবল বৈধ আমদানিকারকরা ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আমদানির আবেদন করবেন। সেখান থেকে মন্ত্রণালয় কাকে কী পরিমাণ আমদানি করতে দেবে সেই সিদ্ধান্ত জানাবে। অনুমোদন পাওয়ার পর কে কী পরিমাণ আমদানি করেছে সেই হিসেবও রাখা হবে।

এ বছর সরকার ৩৭ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে। কিন্তু খোলা বাজারে কৃষক আরও ভালো দাম পাওয়ায় ওই দামে ধান কিংবা চাল কিনতে পারেনি সরকার। চুক্তিবদ্ধ মিলাররাও লোকসানের কথা বলে চাল সরবরাহ থেকে বিরত থেকেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা প্রতি মণ এক হাজার ৪০ টাকা করে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য বাজার উন্মুক্ত রেখেছি। কিন্তু বাজারে এখন ধানের দাম এক হাজার ২০০ টাকা। কৃষক সরকারের কাছে না বিক্রি করে বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করছে। সময় সুযোগ হলে কৃষকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন ধান কিনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করব।

এসএইচআর/এফআর