চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে রাজস্ব আদায়ে ১২.৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক মনে হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রয়েছে বড় ধরনের শঙ্কা। কেননা, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী দুই মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ১ লাখ ৩ হাজার ৪১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার ২০৭ টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ঘাটতি ৫২ হাজার ৬২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

গত অর্থবছরের তুলনায় ১২.৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হলেও করোনা প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশোধিত তিন লাখ এক হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আগামী দুই মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ১ লাখ ৩ হাজার ৪১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে।

এনবিআর থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে ভ্যাট খাত থেকে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৭৬ হাজার ৭৮১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১১.০৪ শতাংশ। আর শতাংশ হিসাবে সাফল্য দেখিয়েছে আমদানি ও রফতানি শুল্ক খাত। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০.৩৬ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ খাতে আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ১৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে এপ্রিল পর্যন্ত আয়কর খাতে ৫৯ হাজার ৬৭০ কোটি ২১ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৮.২৬ শতাংশ।

আর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রেকর্ড ১১৬.১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৩২৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। যেখানে ২০২০ সালের এপ্রিলে আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম করোনাকালে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের ভালো প্রবৃদ্ধিকে আশাব্যঞ্জক বলে দাবি করেছেন সব সময়।

তবে এ বিষয়ে এনবিআরের তিন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ‘লকডাউনে’ সবকিছু পিছিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ মুহূর্তে এনবিআরের বাড়তি কোনো উদ্যোগ নেওয়ারও সুযোগ নেই। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব বলা যায়। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে ‘লকডাউনের’ আগে এনবিআর ২৯ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছিল, যা অনুমোদিত হয়েছে। ফলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।

আরএম/এসএসএইচ