ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার গেট দিয়ে প্রবেশ করছেন শ্রমিকরা

করোনার তাণ্ডবে বড় বড় দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে এ দুরবস্থায় শক্ত হাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির হাল ধরেছে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। দেশের আটটি ইপিজেড একের পর এক চমক দেখাচ্ছে অর্থনীতি খাতে। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা ইপিজেড।
 
১৯৯৩ সালে রাজধানীর অদূরে সাভারে ঢাকা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর অভাবনীয় সাফল্য এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ১৯৯৭ সালে ২১৪ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর এর সম্প্রসারণ করা হয়। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগসহ সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে ঢাকা ইপিজেড দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের স্থান। শান্তিপূর্ণ ও দলবদ্ধ উৎপাদনমুখী কর্ম পরিবেশই হচ্ছে এর মূল চালিকাশক্তি।

২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা ইপিজেড থেকে মোট রফতানি হয়েছে ১৭৮৯ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। মার্চে রফতানি হয়েছে ১৫৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার। এপ্রিলে রফতানি হয়েছে ১৪৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে রফতানি কমেছে ১০ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার

বর্তমানে ঢাকা ইপিজেডে ৯৪ কারখানা রয়েছে, এর মধ্যে বন্ধ মাত্র চারটি। এখানে থাকা কারখানাগুলোতে উৎপাদন বজায় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ইপিজেড কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এসব কারখানায় প্রায় ৭৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

বেপজার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা ইপিজেড থেকে মোট রফতানি হয়েছে ১৭৮৯ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। মার্চে রফতানি হয়েছে ১৫৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার। এপ্রিলে রফতানি হয়েছে ১৪৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে রফতানি কমেছে ১০ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার।


 
অন্যদিকে, বেপজার অধীন আটটি ইপিজেডে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট রফতানি হয়েছে ৮৫ হাজার ৩৭১ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে শুধু ঢাকা ইপিজেড থেকে রফতানি হয়েছে ৩০ হাজার ৩২ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার। নতুন করে ৭১টি কারখানা চালুর প্রক্রিয়া চলমান। করোনাকালে ইপিজেডগুলোতে মোট ৩০ হাজার নতুন শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে।

১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে চালু হওয়ার পর ঢাকা ইপিজেডে বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৮ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ১৪৩ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার। ১০ বছর পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৭১৩ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন ডলারে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগ হয়েছে এক হাজার ৫২৫ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার

১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে চালু হওয়ার পর ঢাকা ইপিজেডে বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৮ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ১৪৩ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার। ১০ বছর পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৭১৩ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন ডলারে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগ হয়েছে এক হাজার ৫২৫ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

 আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তাদের কাছে দেশের ইপিজেডগুলো এখন বিনিয়োগের স্বর্গভূমি হিসেবে পরিগণিত এবং প্রশংসিত। স্বল্পতম উৎপাদন ব্যয়, শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা এবং শিল্পবান্ধব কর্মপরিবেশের ফলে বিশ্ববাজারে বেপজা এখন একটি ব্র্যান্ড। সরকারের উদার বিনিয়োগ ও শিল্পনীতির ফলে বর্তমান সরকারের অধীনে বিগত ১২ বছরে বেপজা বিনিয়োগ, রফতানি ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে।

বর্তমানে অসংখ্য বিদেশি ক্রেতা রয়েছেন ইপিজেডে। বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি হচ্ছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে নাইকি, রিবক, লি, অ্যাডিডাস, ইন্টার স্পোর্টস, লাফুমা, গ্যাপ, জেসি পেনি, ওয়ালমার্ট, কেমার্ট, আমেরিকান ঈগল, এইচ অ্যান্ড এম ইত্যাদি। সারাবিশ্বে নাইকি, পুমা, পলো, ইন্টার স্পোর্টস, রালফ লরেন ব্র্যান্ডের যে পরিমাণ পণ্য চাহিদা রয়েছে তার বেশির ভাগই তৈরি হয় বাংলাদেশের ইপিজেডে। বিগত কয়েক বছরে দেশের মোট জাতীয় রফতানিতে বেপজার অবদান প্রায় ২০ শতাংশ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগে অবদান রয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।



পোশাক শিল্পের বাইরেও ঢাকা ইপিজেডে অনেক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- অটো কার পার্টস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য যেমন- জুতা, ব্যাগ, ডিসপোজেবল প্লাস্টিক সিরিঞ্জ, অ্যাপ্রন, ক্যাপ, ইলেকট্রনিক চিপস, লেবেল, পেপার প্রোডাক্ট, মেটাল বাটন, প্লাস্টিক পণ্য; গার্মেন্টস এক্সেসরিজ যেমন- হ্যাঙ্গার, বারকোড, সুতা, জিপার, রিবন, বাটন, প্রাইস টিকিট, করোগেটেড কার্টন, টেক্সটাইল, প্রটেকটিভ ক্লদস, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ডেনিম পণ্য, মোটরবাইক কভারসহ সোয়েটার ইত্যাদি।

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং জাতীয় রফতানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেপজার অধীনে ইপিজেডগুলো বিশেষ করে ঢাকা ইপিজেড দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক অবদান রাখছে। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক, নিরাপত্তা এবং কর্ম প্রণোদনা বিষয়ে প্রতিনিয়ত সচেতন করা হয় এখানে।

বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি হচ্ছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে নাইকি, রিবক, লি, অ্যাডিডাস, ইন্টার স্পোর্টস, লাফুমা, গ্যাপ, জেসি পেনি, ওয়ালমার্ট, কেমার্ট, আমেরিকান ঈগল, এইচ অ্যান্ড এম ইত্যাদি। সারাবিশ্বে নাইকি, পুমা, পলো, ইন্টার স্পোর্টস, রালফ লরেন ব্র্যান্ডের যে পরিমাণ পণ্য চাহিদা রয়েছে তার বেশির ভাগই তৈরি হয় বাংলাদেশের ইপিজেডে

এই সচেতনতা সৃষ্টির ফলস্বরূপ সাভার ইপিজেড সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে স্যাটেলাইট টাউন। এখানকার ব্যাকওয়ার্ড অ্যান্ড ফরওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, এক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজসহ পরিবহন, খাদ্য সরবরাহ, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, টেলিযোগাযোগ, বিমা, এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, হোটেল, হাউজিংসহ অন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যবসার মাধ্যমে দেশের আর্থিক উন্নয়নে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে পরোক্ষভাবে যথেষ্ট অবদান রাখছে।
 
ডিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন রাসেল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামে যখন ছিলাম অনেক অভাব-অনটন ছিল। দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটতো না। ঢাকায় এসে ইপিজেডে কাজ নিই। এখন বাড়িতে ইটের আধাপাকা ঘর। এখানে খুব ভালো আছি। ইপিজেড না থাকলে হয়তো আগের অবস্থায় থাকতাম।
 
পোশাক শ্রমিক আয়েশা বলেন, আমার পরিবারের চার সদস্য এখানে কাজ করে। খুব ভালো আছি। কাজের পরিবেশ অনেক ভালো। ইপিজেড না হলে আমাদের কর্মসংস্থান হতো না। এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ।

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, ইপিজেড বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রাণ। ইপিজেডের কারণে পোশাক শিল্পের রফতানির ধারা অব্যাহত আছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইপিজেড স্থাপন না হলে হয়তো করোনাকালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তো। এটি থাকায় মহামারির মধ্যেও আমাদের রফতানির ধারা অটুট আছে।
 
এ বিষয়ে ঢাকা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সোবাহান বলেন, আমাদের ইপিজেডে গত মাসের তুলনায় রফতানি কিছুটা কমেছে। তবে এর আগে করোনার সময়ও বেশি রফতানি হয়েছে। ক্রয় আদেশও ধীরে ধীরে বাড়ছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস। সঠিক তত্ত্বাবধান এবং সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিসসহ সার্বিক সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে পেরেছে ঢাকা ইপিজেড।

 


 
তিনি বলেন, করোনাকালে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইপিজেডে উৎপাদন চালু রয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা ইপিজেডে একজন শ্রমিকও করোনায় আক্রান্ত হননি। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছি বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
 
ঢাকা ইপিজেডের বাইরেও সাভারে হাজারেরও বেশি শিল্পকারখানা রয়েছে। ইপিজেড গড়ার পর এসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানাও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে করোনাকালে তারা শ্রমিকদের কর্মমুখী রেখেছে। বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয় আদেশের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
 
আরএইচ/এমএআর/