বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক

মহামারির মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তার কি‌স্তি আদা‌য় শুরু কর‌তে ব্যাংকগু‌লো‌কে সম্প্র‌তি নি‌র্দেশ দি‌য়ে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণের প্রথম কিস্তির টাকা জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ‌দি‌তে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বলা হচ্ছে। বিষয়‌টি নি‌য়ে উ‌দ্বেগ প্রকাশ ক‌রে‌ছে পোশাক মা‌লিকরা। বর্তমান প‌রি‌স্থি‌তি বি‌বেচনায় এক বছর পর‌ কি‌স্তি শুরু কর‌তে চান ‌তারা।

বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) এ বিষ‌য়ে এক‌টি খোলা চি‌ঠি দি‌য়ে‌ছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক।

বিজিএমইএর সভাপতি চিঠিতে বলেছেন, “শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেওলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ফোর্স মেজার্স ক্লোজেজের কারণে পোশাক শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সাথে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে।”

প্রণোদনা ঋণের সুদ ৬ মাসের জন্য স্থগিত বা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্তত এক বছর না বাড়ালে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক।

তিনি বলেন, “শিল্প ভালো করছে এবং সরকারের কাছ থেকে সকল সহযোগিতা পাচ্ছে- এই যে একটি ধারণা অনেকেই পোষণ করছেন তার আজ প্রকৃত পুনর্মূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।”

খোলা চিঠিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পত্র জারি করেছে।”

তিনি বলেন, “এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্তত পক্ষে ৬ মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্তত পক্ষে আরও অতিরিক্ত এক বছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।”

• ২০২০ সালে যা রপ্তানি করেছি, তা ২০১৮ সালে যা রপ্তানি করেছিলাম তার তুলনায় ৮.৫৫ শতাংশ কম।
• ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।
• রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক।

রুবানা হক বলেন, “রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সদ্য ২০২০-এর ডিসেম্বর মাসের যে রপ্তানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানেও আমাদের রপ্তানির উদ্বেগজনক চিত্র বহাল আছে। ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানিতে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত থেকে পতন হয়েছিল ৯.৬৪ শতাংশ, যে কারণে ২০২০ সালের বার্ষিক রপ্তানিতে ১৬.৯৪ শতাংশ দৃষ্টান্তহীন পতন ঘটেছে।”

তিনি বলেন, “২০২০ সালের জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮.০৭ শতাংশ। উল্লেখিত মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি ঋণাত্মক ০.৪৫ শতাংশ প্রবদ্ধি নিয়ে তূলনামলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট নিটওয়্যারের চাহিদা।”

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “গত দুই বছরের রপ্তানির প্রবণতার দিকে তাকালে আমরা দেখি যে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৬.০৩ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৪.৩২ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের রপ্তানিতে (২ বছরের) প্রবৃদ্ধির পরিবর্তন হয়েছে ঋণাত্মক ৮.৫৫ শতাংশ। এর অর্থ হলো, আমরা ২০২০ সালে যা রপ্তানি করেছি, তা ২০১৮ সালে যা রপ্তানি করেছিলাম তার তুলনায় ৮.৫৫ শতাংশ কম।”

তিনি বলেন, “সমগ্র বিশ্ব দেখেছে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কী এবং খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর সেগুলো কী প্রভাব রেখেছে। বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দ ক্রিসমাস সেল। এসবের প্রভাবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।”

“করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। যেহেতু টিকা পাওয়া এখনও নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই আমাদের আশঙ্কা, রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে,” বলেন তিনি।

এ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ সভাপতি নীতিনির্ধারকদের শিল্পের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

এসআই/এইচকে