একদিনের ব্যবধানে রাজধানীতে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ৬০-৮০ টাকা। ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি হচ্ছে এ খবরে বুধবার (১১ আগস্ট) ২০০ টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা কেজিতে। সেই কাঁচামরিচ বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) আবারও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচের পাশাপাশি বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। তবে স্থিতিশীল রয়েছে সবজির বাজার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বুধবার মরিচ কিনেছি ৫০০ টাকা পল্লা। আজ মরিচের পাল্লা এক হাজার টাকা, তাই কম করে কিনেছি। তারা বলছেন, বুধবার ছাড়া এ সপ্তাহে প্রতিদিন মরিচ বিক্রি করেছি ১৮০-২০০ টাকা কেজিতে। খুচরা বিক্রি করেছি ২২০-২৪০ টাকা কেজিতে।

ক্রেতারা বলছেন, সবজি দাম তুলনামূলক কম থাকলেও হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে মরিচ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী এনামুল হক ঢাকা পোস্টেকে বলেন, ভারত থেকে মরিচ আসছে এ খবরে বুধবার মরিচের দাম কমেছিল। কিন্তু আজ আবার বেড়েছে। আজ কারওয়ান বাজার থেকে এক হাজার টাকা পাল্লা (৫কেজি) কিনতে হয়েছে। এখন আমি খুচরা বিক্রি করছি ২২০-২৩০ টাকা কেজিতে।

কাঁচামরিচের দাম বাড়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই চাহিদার তুলনায় মরিচের সরবরাহ কম। এ কারণে মরিচের দাম বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রওশন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাঁচামরিচের মৌসুম শেষ। প্রতিবছর বর্ষার সময় মরিচের দাম বাড়ে। তবে এবার সরকারের অনুমতি নিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি করা হচ্ছে। আমদানি করা মরিচ আসতে শুরু করলেই দাম কিছুটা কমবে।

কাঁচামরিচের সংকট মেটাতে ও দামের লাগাম টেনে ধরতে চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে, মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মোট ১২টি ট্রাকে কাঁচামরিচ আনা হচ্ছে।

দুটি স্থল বন্দরের মধ্যে ভোমরা দিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি করবে জে কে এন্টারপ্রাইজ। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬৫০ টন কাঁচামরিচ আমদানি করবে। এর মধ্যে মেসার্স বিএইচ ট্রেডিং ১৫০ টন, মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ ২০০ টন ও মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ ৩০০ টন ভারতীয় কাঁচামরিচ আমদানি করছে। এ মরিচগুলো রাজধানীতে চলে এলে দাম কমতে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আজ কাঁচামরিচের পাশাপাশি হঠাৎ পেঁয়াজের দামও বাড়তে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। তবে আদা ও রসুনের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

রাজধানীর রামপুরার এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৪৫ টাকা কেজিতে। তিনি বলেন, ঈদের পর পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।

এ ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের পরের সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা। সেখান থেকে ৪০ টাকা, এরপর ৪৫ টাকা করে গত সপ্তাহেও বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন বিক্রি করছি ৫০ টাকা কেজিতে। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রিও করছি।

রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজ-মরিচের দাম বাড়ালেও সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সবজির মধ্যে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজিতে। একই দরে বিক্রি হচ্ছে-পটল ও ঢেঁড়স। তার চেয়ে ৫ টাকা বেড়ে অর্থাৎ ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে- শসা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও বেগুন। ঝিঙ্গা ও কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে। আর করলা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে।

শাকের মধ্যে ২০-২৫ টাকা করে পুঁইশাক ও লাউ শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে। লাল ও পালন শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে পিস প্রতি ৪৫-৫০ টাকায়।

মাছ-মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজিতে। মাছের মধ্যে পাঙ্গাশ ১২০-১৩০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০-২০০ টাকা ও রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০-৩৪০ টাকা কেজিতে।

এমআই/এসএসএইচ