করোনায় বিপাকে ছোট কারখানা, বড় চ্যালেঞ্জে পোশাক খাত
ভার্চুয়াল সংলাপ
পোশাক খাতের ছোট কারখানাগুলো করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এতে আগামীতে পোশাক খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ‘কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধার : জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এ অভিমত ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। সংলাপটি আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি)।
বিজ্ঞাপন
সংলাপে বলা হয়, চলমান করোনায় বড় কারখানার চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ছোট কারখানাগুলো। পোশাক সংগঠনের সদস্য নয় এমন এবং নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলো বেশি সমস্যায় পড়েছে। ঋণ পাওয়ার জটিলতার কারণে বেশিরভাগ ছোট কারখানাগুলো ঋণের জন্য আবেদন করেনি। ৯০ শতাংশ বড় কারখানার বিপরীতে মাত্র ৪০ শতাংশ ছোট কারখানা প্রণোদনার অর্থের জন্য আবেদন করেছে। নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ও ব্যাংকের আমানতের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল।
সংলাপে শুরুতে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এমআইবির গবেষণা তুলে ধরেন। তিনি জানান, মোট ৬১০টি পোশাক কারখানায় পরিচালিত জরিপের ওপর ভিত্তি করে গবেষণায় পোশাক খাতকে পুনরুদ্ধারে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংলাপের সভাপতি সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি শ্রমিকদের জন্য একটি সামাজিক সুরক্ষা বীমারও প্রস্তাব করেন, যেখানে মালিক, শ্রমিক, সরকার, ক্রেতা এবং উন্নয়ন অংশীদাররা অংশ নেবে।
সংলাপের সঞ্চালনা করেন এমআইবি-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুদ্দিন হাসিব। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এতে বলা হয়, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। সদস্য নয় এমন কারখানাগুলোকে অনতিবিলম্বে অ্যাসোসিয়েশনের সদ্যস্যভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়াটিকে কমপ্লায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) দায়িত্ব নিয়ে সামনে এসে শ্রমিকদের তালিকা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
কারাখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার দিকে আরও জোর দেওয়ার কথাও উঠে আসে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমপি শিরীন আখতার বলেন, করোনার সময়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেও পোশাক শিল্প আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই সময়ে আমরা অনুধাবন করেছি, আপদকালীন সময়ের জন্য আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা সবার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সুশাসনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যারা কাজ হারিয়েছেন বা যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। শ্রমিকেদের প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্যগত বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও শ্রমিকরা যেনো ন্যূনতম মজুরি পান সেটাও দেখা দরকার। শ্রমিকরা কখন করোনা টিকা পাবেন সে বিষয়েও আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বেশিরভাগ শ্রমিকের প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজিএমইএর পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন সিপিডির প্রস্তাবনার সাথে সহমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, এই গবেষণায় সার্বিক পরিস্থিতি উঠে আসলেও করোনার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে আলাদা করে দেখার সুযোগ রয়েছে।
শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার অপর্যাপ্ততার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা সবার আগে ভেবে দেখতে হবে।
এমআই/এইচকে