করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এ অবস্থায় বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। তাই দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের দেওয়া সুবিধা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দেওয়া জরুরি। 

পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’-এর প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের নতুন সভাপতি সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই’র পক্ষ থেকে সমসাময়িক অর্থনীতি বিষয়ক ১১টি এজেন্ডা’র ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২১ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৫৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এরইমধ্যে বিতরণ হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে এটি আরও দ্রুতগতিতে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এ ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর জোর দেন তিনি।

ঋণ পাওয়াসহ আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে দেশের কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে একটি বিশেষ ব্যাংক অথবা ‘এসএমই বন্ড’ প্রবর্তন প্রস্তাব করে ডিসিসিআই সভাপতি কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পকে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের সংজ্ঞায়নে আলাদা করার প্রস্তাব করেন; যার মাধ্যমে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়াও দেশের এসএমইখাতের সার্বিক উন্নয়নে এসএমই নীতিমালার পরিবর্তে ‘এসএমই ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’ প্রবতর্নের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে এখাতের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বেশিরভাগই রপ্তানি হয় আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশে, যারা করোনা মোকাবিলায় বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে এ অঞ্চলের দেশ থেকে আমাদের রপ্তানি পণ্যের অর্ডার কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদেরকে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আরও বেশি মাত্রায় নজর দিতে হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে, কর্পোরেট করের বিদ্যমান হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ডিসিসিআই’র পক্ষ থেকে এবছর এশিয়া অঞ্চলে ‘ডিসিসিআই ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বিদ্যমান বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা হারাবে এবং এ পরিস্থতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া সুযোগ-সুবিধার সময়সীমা বাড়ানোর দাবি উপস্থাপন করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি একই সময়ে বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারিখাতকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।
 
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালক মো. শাহিদ হোসেন, গোলাম জিলানী, হোসেন এ সিকদার এবং নাসিরউদ্দিন এ ফেরদৌস।

এসআই/জেডএস