মো. ফখরুল আলম

কারনেট সুবিধায় আসা ১১২টি বিলাসবহুল গাড়ির নিলামের পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মো. ফখরুল আলম।

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কার্নেট গাড়ির নিলাম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান। 

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনায় আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) এবং ম্যানুয়াল নিলামে গাড়িগুলো বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই নিলামে ১১২টি বিলাসবহুল গাড়ি তোলা হবে। এর আগে গত টানা চার বার নিলামে তুলেও প্রত্যাশিত দর না পাওয়ায় প্রতিবারই নিলাম বাতিল করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও বলেন, ১১২ গাড়ির নিলামের জন্য গাড়ির বিস্তারিত বিবরণ ক্যাটালগে দেওয়া আছে। এভাবে অতীতে ক্যাটালগ তৈরি করা হয়নি।  

কাস্টম কমিশনার বলেন, সারাদেশ থেকে ব্যাপক হারে অংশগ্রহণকারীদের যুক্ত করে উচ্চমূল্যের এসব গাড়ি বিক্রির জন্য ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) এবং ম্যানুয়াল নিলামের আয়োজন করা হয়েছে। ই-অকশন পদ্ধতিতে নিলাম হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম ও ঢাকা ছাড়াও দেশের সব জেলার বাসিন্দারা এই নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এতে নিলামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক দরও পাওয়া যাবে। এসব গাড়ি বিক্রির মাধ্যমে যেমন বন্দরের জায়গা খালি হবে তেমনি সরকারের কোষাগারেও বিপুল রাজস্ব জমা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, নিলামের গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে- মিতশুবিশি ২৬টি, মার্সিডিজ বেঞ্চ ২৫টি, বিএমডব্লিউ ২৫টি, ল্যান্ডরোভার ৭টি, ল্যান্ডক্রুজার ৭টি, একটি সিআরভি, লেক্সস ৬টি, ফোর্ড ৫টি, জাগুয়ার ৩টি, একটি দাইয়ু ও একটি হোন্ডাসহ বিশ্বের নামিদামী ব্রান্ডের গাড়ি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, পর্যটক সুবিধায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক দশক আগে এসব গাড়ি এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পর্যটকরা। শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারের কারণে গাড়িগুলো আটকে যায়। ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে খালাসের শর্ত আরোপ করা হলেও খালাস না করায় বন্দরে পড়ে থাকে দিনের পর দিন।

কাস্টমসের নিলাম শর্ত অনুযায়ী, যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। টেন্ডারে অংশ নেওয়ার সময় শিডিউলের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সনদ অথবা টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে। আর ব্যক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে।

আরও জানা গেছে, আগ্রহী কেউ গাড়ি কিনতে চাইলে টেন্ডার জমা দিতে হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও মোংলায় কাস্টমস অফিসে রাখা টেন্ডার বাক্সে টেন্ডার আবেদন খামবন্ধ অবস্থায় জমা দিতে হবে। এছাড়া আগ্রহী কেউ গাড়ি দেখতে চাইলে জাতীয় পরিচয় কিংবা পাসপোর্টের ছবিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করে আগে থেকে পাস নিতে হবে।

গাড়ি পরিদর্শনের তিন দিন আগে পাস নিতে আবেদন করতে হবে। গাড়ি পরিদর্শনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৭ থেকে ২৮ অক্টোবর এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর। অনলাইনে নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য  ক্রেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

আগ্রহী দরদাতাদের আগামী ৩ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ৪ নভেম্বর দুপুর ১টা পর্যন্ত কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইট অথবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটের ই-অকশন লিংকে প্রবেশ করে দরপত্র দাখিল করতে পারবেন। অথবা, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রশাসন), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (নীচ তলা সাধারণ শাখা, রুম নং-১৩৮), ঢাকার সহকারী/ডেপুটি কমিশনার (সদর, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) আই.ডি.বি ভবন (৪র্থ তলা), সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিস ও মোংলার কাস্টম হাউসের  নিলাম শাখায় টেন্ডার বক্সে খামবদ্ধ দরপত্র জমা দেওয়া যাবে।

ব্যক্তি পর্যায়ে এনআইডি কার্ড ও টিন নম্বর দিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও টিন নম্বর দিয়ে খুব সহজেই যে কেউ ঘরে বসে  নিলাম কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

কেএম/ওএফ