পদত্যাগ করা মেহমুদ হোসেনকে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে যোগ দিতে বলেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

মেয়াদ শেষ হওয়ার ১১ মাস আগে গত ১৮ জানুয়ারি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন মেহমুদ হোসেন। তার এমডি পদে থাকার মেয়াদ ছিল আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পদত্যাগ করার ১১ দিন পর রোববার (২৯ জানুয়ারি) গভর্নর তাকে ডেকে নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে যোগদান করতে বলেন। এতে ইতিবাচক সায় দিয়েছেন মেহমুদ হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, সিকদার পরিবারের চাপের মুখে মেহমুদ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার গভর্নরসহ একাধিক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্যাংকটির অন্যতম পরিচালক রন হক সিকদার। এমডির পদত্যাগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে ওই বৈঠক হয়।

আরও পড়ুন >> ‘বাধ্য হয়ে’ মেহমুদ হোসেনও ছাড়লো ন্যাশনাল ব্যাংক

তবে এমডির পদত্যাগ প্রসঙ্গে ২৫ জানুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন তার পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করেছেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়নি।

এতো আরও বলা হয়, গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউসে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭-৮ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন ব্যাংকের পরিচালকরা রিকভারি ও নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) সংক্রান্ত মিটিংয়ে যোগ দেন। ওই মিটিংয়ে অডিট কমিটির পক্ষ থেকে তাকে ব্যাংকের বিভিন্ন ইনডিকেটর ও সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

ওই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯ জানুয়ারি অডিট কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এসময় তিনি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জানুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের কাছে তিনি ছুটির জন্য আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে একই দিনে তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

মেহমুদ হোসেন এক বছরের বেশি সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন ব্যাংকের কোনো সফলতা আসেনি বলে দাবি করে  ন্যাশনাল ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে মেহমুদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।  

ন্যাশনাল ব্যাংকে নানা অনিয়ম ও এমডির পদত্যাগের ঘটনা নতুন নয়। গত দেড় দশকে ব্যাংকটির বেশির ভাগ এমডিই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। যে কারণে ২০১৪ সালে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি ব্যাংকটিকে 'দুর্বল' হিসেবে চিহ্নিত করে একজন নির্বাহী পরিচালক পদমর্যদার কর্মকর্তাকে 'সমন্বয়ক' হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকটির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ব্যাংকটির মালিকানায় রয়েছে সিকদার গ্রুপ। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জয়নুল হক সিকদার মারা যাওয়ার পর থেকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। তারাই ব্যাংকটির নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

জানা গেছে, বিভ্ন্নি অনিয়মের কারণে দুই বছর ধরে ন্যাশনাল ব্যাংক বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিচালকরা তাদের পছন্দের গ্রাহকদের ঋণ দিতে চাইছেন। জোর করে ঋণ পর্ষদে তুলছেন। মেহমুদ হোসেন এসব কাজে রাজি ছিলেন না। পর্ষদের প্রভাবশালী দুই পরিচালকের সঙ্গে বনিমনা হচ্ছিল না তার। তাই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।  

এর আগের এমডি শাহ সৈয়দ আব্দুল বারীও মেয়াদপূর্তির আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। এই নিয়ে গত এক দশকে অন্তত ৬ জন এমডি পদত্যাগ করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুয়ায়ী, বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি। বিতরণ করা ঋণের যা ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।

এসআই/জেডএস