বাংলাদেশ ব্যাংক/ ফাইল ছবি

দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নিজ নিজ নীতিমালা অনুযায়ী ভোক্তা, ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদী কৃষি ঋণ বিতরণের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নীতিমালা অনুসরণের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা সংস্থা, মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, স্টক ব্রোকারেজ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।

এসব ঋণ বিতরণে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম এবং ঝুঁকি নিরসন কৌশল ব্যবহার করতে পারবে।

বুধবার (০৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব ধরনের ঋণ বিতরণে আইসিআরআর নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। তবে ভোক্তা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকার বেশি এবং উৎপাদনশীল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করতে পারবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা সংস্থা, মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, স্টক ব্রোকারেজ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো।

প্রসঙ্গত, দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছার প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ঋণের ঝুঁকি পরিমাপের নতুন নীতিমালা উদ্বোধন করেন গভর্নর ফজলে কবির। ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নামের এ নীতিমালায় ঋণের পরিমাণ ও গুণগত উভয় ধরনের সক্ষমতার মূল্যায়ন শর্ত রাখা হয়। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এই শর্তগুলো পূরণ না করেও ঋণ পাবেন গ্রাহক।

মূল্যায়নের ভিত্তিতে গ্রাহককে চার শ্রেণিতে বিভাজন করবে ব্যাংকগুলো। কোনো গ্রাহক ‘এক্সিলেন্ট’ বা ‘গুড’ রেটিং পেলে ব্যাংক তাকে অর্থায়ন করতে পারবে। ‘মার্জিনাল’ রেটিংধারী গ্রাহককে পুরোনো ঋণ নবায়ন বা নতুন করে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

তবে ‘আনএকসেপ্টেবল’ রেটিংধারীকে কোনো পরিস্থিতিতেই নতুন ঋণ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো, যদি না আগের ঋণ শতভাগ নগদ পরিশোধ হয় অথবা জামানত দিয়ে ঋণটি আচ্ছাদন করা হয়।

‘আনএকসেপ্টেবল’ রেটিংভুক্ত গ্রাহকের আগের ঋণ সর্বোচ্চ দুবার নবায়ন বা বর্ধিত করা যাবে।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, রেটিং করার ক্ষেত্রে একটি পার্টি বা গ্রাহকের পরিমাণগত সক্ষমতায় ৬০ শতাংশ নম্বর এবং গুণগত সক্ষমতায় ৪০ শতাংশ নম্বর থাকবে। পরিমাণগত সক্ষমতা সূচকে ৬০ নম্বরের মধ্যে মোট গৃহীত ঋণ ও আর্থিক সক্ষমতায় ১০, চলতি দায় ও তরল সম্পদে ১০, মুনাফার সক্ষমতায় ১০, সুদ পরিশোধের সক্ষমতা ও নগদ প্রবাহের ওপর ১৫, পরিচালনগত দক্ষতায় ১০ এবং ব্যবসার মানের ওপর পাঁচ নম্বর থাকবে।

এছাড়া গুণগত সক্ষমতায় ৪০ নম্বরের মধ্যে কার্যদক্ষতার আচরণে ১০, ব্যবসা ও খাত ঝুঁকিতে সাত, ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে সাত, জামানত ঝুঁকিতে ১১, সম্পর্ক ঝুঁকিতে তিন, পরিপালন ঝুঁকিতে দুই নম্বর থাকবে।

এই রেটিংয়ে কোনো গ্রাহক আশির বেশি নম্বর পেলে তাকে ‘চমৎকার’, সত্তরের বেশি এবং আশির কম পেলে ‘ভালো’, সত্তরের কম এবং ষাটের বেশি পেলে ‘প্রান্তিক’ এবং ষাটের নিচে নম্বর পেলে ‘আনএকসেপ্টেবল’ রেটিং দেওয়া হবে। তবে কোনো গ্রাহক গুণগত রেটিংয়ে যত নম্বরই পাক না কেন পরিমাণগত রেটিংয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর না পেলে তাকে ‘আনএকসেপ্টেবল’ রেটিং দেওয়া হবে।

এসআই/এসআরএস