প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করে বিনিয়োগকারীদের সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা লোপাটের দায়ে তিন ব্যক্তিকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

যাদের জরিমানা করা হয়েছে তারা হলেন-এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগকারী জসিম উদ্দিন, সিটি ব্রোকারেজের বিনিয়োগকারী সাইফ উল্লাহ এবং এজি মাহমুদ। এর মধ্যে জসিম উদ্দিনকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ এবং এজি মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ২৯ টাকা ৪০ পয়সার শেয়ারের দাম কারসাজি করে ৬৭ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এই সময়ে অভিযুক্তরা তাদের হাতে থাকা ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫১টি শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯৯২ টাকা লোপাট করেন। 

তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অভিযুক্তদের শুনানি নেয়। সব প্রমাণ থাকায় এবং শুনানিতে যথাযথ উত্তর দিতে না পারায় অভিযুক্তদের ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ ৩০ দিনের মধ্যে কমিশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি সমস্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়েছে।

কারসাজি করে সাড়ে ৫ কোটি টাকা লুটে নেওয়ার ঘটনায় ৭৫ লাখ টাকা জরিমানাকে দায়মুক্তি বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আইনে বিএসইসিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সর্বনিন্ম ১ লাখ টাকা থেকে ইচ্ছে মতো জরিমানা করার। কিন্তু কমিশন কারসাজির ২ বছর পর জরিমানা করেছে, তাও নামমাত্র। এতে বাজারে কারসাজির ঘটনা আরও বাড়বে।  

মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিএসইসি শেয়ার কারসাজির বিষয়টি নিয়ে প্রথমে অভিযুক্তদের শোকজ করে। ডিএসইর সমস্ত কাগজপত্র ও শোকজের জবাব দেখে তারপর আবার সশরীরে শুনানিতে ডাকা হয়। শুনানির পর যদি দেখা যায় সব কিছুই প্রমাণিত হয়েছে তখন বড় ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় অভিযোগ আংশিক প্রমাণিত হয়েছে। এটার প্রেক্ষিতে ছোট জরিমানা করা হয়। এই বিষয়টির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাই নিয়ম থাকলেই তার সবটুকু প্রয়োগ করতে হবে তা নয়।

এ বিষয় জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশনের উচিৎ এমনভাবে জরিমানা করা যাতে আর সে কারসাজি করতে সাহস না করে। এ ক্ষেত্রে যে পরিমাণ মুনাফা করেছে, সেই টাকা কিংবা তার দ্বিগুণ জরিমানা করা। এছাড়াও তাকে আজীবন পুঁজিবাজারে লেনদেনের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে কমিশন। এমন কিছু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার।

তবে সবার আগে কারসাজির বিচার কাজের দীর্ঘসূত্রিতা দূর করা জরুরি বলে জানান তিনি। তার কারণ হিসেবে বলেন, কারসাজির জরিমানা হোক আর না হোক, আল্টিমেটলি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের ক্ষতি আর পোষানো যায় না।

এমআই/আরএইচ/এনএফ