• ভর্তির আগে তথ্য যাচাইয়ের পরামর্শ
• এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়বে, সনদ বৈধ হবে না

দেশের ২৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা জারি করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এইচএসসি ফল প্রকাশের পর ভর্তি মৌসুম শুরু হচ্ছে। এটাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সর্তক করতে এ নির্দেশনা জারি করা হবে।

বৃহস্পতিবার বা রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এ নির্দেশনা জারি করা হবে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে। ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। এরমধ্যে রয়েছে সনদ বিক্রি, অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালানো, ইউজিসির অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাস/বিল্ডিং চালানো, মালিকানা দ্বন্দ্ব সরকার বন্ধ করেছে, কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর মতো অভিযোগ রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের এসব ভর্তির আগে বিশ্ববিদ্যালয় সর্ম্পকে খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হতে হবে। পরে কোনো সমস্যায় পড়লে এর দ্বায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নেবে না।

প্রতি বছর ভর্তি মৌসুমের আগে এ ধরনের সর্তকতা নোটিশ দেওয়া হয় যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সর্ম্পকে জেনে বুঝে ভর্তি হতে পারে। এবার সেটি দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা রয়েছে সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খুবই শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি আকারে তা জারি করা হবে।

বিশ্বজিৎ সাহা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্যমতে, দেশের বর্তমানে বর্তমানে ১০৫ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টি শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে ২৭ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সর্তকতা জারি করা হচ্ছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে উপচার্য, উপ-উপচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তথ্য দেওয়া হবে। কারণ সনদে স্বাক্ষরের দায়িত্ব উপচার্যের। তাই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত এ তিনটি পদের ব্যক্তি না থাকবে তাদের বিষয়টি জানানো হবে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হবে। কারণ বাংলাদেশে এখনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনুমতি নেই।

গণবিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউজিসির পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের তালিকা প্রস্তুত। যেকোন সময় এটি জারি করা হবে।

এ তালিকায় কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইউজিসির ওয়েবসাইটে স্টার মার্কস করা যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলো এ গণবিজ্ঞপ্তিতে আসবে।

অননুমোদিত ক্যাম্পাস চালাচ্ছে ৯টি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আউটার ক্যাম্পাস বা অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা বন্ধ করেছে দিয়েছে ইউজিসি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি স্টার মার্কস দেওয়া আছে। এরকম ৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলোর রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউদান ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

এছাড়াও গণবিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিতভাবে বিবিএ, পরিবেশ বিজ্ঞান, এমবিবিএস, বিডিএস এবং স্কাইকোথেরাপি প্রোগ্রামগুলো হাইকোর্ট ডিভিশন ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টি এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

অনুমোদন ছাড়া ক্যাম্পাস চালাচ্ছে শরীয়তপুরের জেডএইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিবিএ প্রোগ্রামের অনুমোদন নিয়ে আরও ১০টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এগুলো হলো-জেনারেল বিবিএ, ফিন্সান্স ইন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট,বিবিএ ইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, বিবিএ ইন মার্কেটিং, বিবিএ ইন ম্যানেজম্যান্ট, বিবিএ ইন ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, বিবিএ ইন অ্যাকাউন্টিং, বিবিএ ইন ইকনোমিস, বিবিএ ইন ইন্টারপেনারশিপ, বিবিএ ইন স্লাপাই চেইস ম্যানেজম্যান্ট পরিচালনা করছে।

মালিকা দ্বন্দ্ব রয়েছে ব্রিটেনিয়া ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউভিভার্সিটি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ডাবল স্টাল দেওয়া হয়েছে। ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুইজন মালিক একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে একটি গ্রুপ ধানমন্ডি অন্য গ্রুপউত্তরা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক সময় কোর্টের রায়ে ধানমন্ডি বাড়ি নম্বর-২১/এ, সড়ক নম্বর-১৬ (পুরাতন-২৭), ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯ ঠিকানাটি হাইকোর্ট ডিভিশনের ১ বছরের স্থগিতাদেশ থাকায় কমিশনের ওয়েব সাইটে আপলোড করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই স্থগিতাদেশের কার্যকারিতা ভ্যাকেট হয়ে যাওয়ায় ইবাইস ইউনিভার্সিটির ওই ঠিকানা কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে বাতিল করা হলো। তাই বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে পরিপ্রেক্ষিতে দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার ঠিকানা এবং প্রোগ্রামগুলো ইউজিসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

মালিকানা দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা রয়েছে আরও চারটিতে। এগুলো হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি। এছাড়াও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত হচ্ছে।

শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি পায়নি। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি। হাইকোর্টের নির্দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ইউজিসির যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নবিদ্ধ, আইন লঙ্ঘন করে প্রোগ্রাম ও ক্যাম্পাস চালাচ্ছে সেগুলোতে শিক্ষার্থীরা যাতে ভর্তি না হন সেজন্য গণবিজ্ঞপ্তির চিন্তা করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য কেউ যেন কোথাও না জেনে ভর্তি হয়ে প্রতারিত না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ করা। তিনি বলেন, এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ছাত্রছাত্রীরা বিপদে পড়বে। তাদের সনদ বৈধ হবে না। তারপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তবে মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি কোনো দায় নেবে না। কেননা, চাকরিদাতারা প্রায়ই ইউজিসি থেকে সনদ সত্যায়ন করে থাকে। কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য শিক্ষাবর্ষের আগেই তথ্য জানানোর ব্যবস্থা করা হয়।
 
এনএম/এসএম