·  সব শ্রেণিতে কমছে সিলেবাস
·  দ্বিধা দ্বন্দ্বে জেএসসি শিক্ষার্থীরা
·  প্রাথমিকের সিলেবাসে আরও কমছে

করোনা মহামারির কারণে এক বছর ধরে বন্ধ থাকার পর ৩০ মার্চ খুলছে দেশের সব প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া শিক্ষাসূচি পুনরুদ্ধারে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে ১ মার্চ একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হলেও এটি আরও সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে।

এরমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণির জন্য ৯ মাসের সিলেবাস তৈরি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এতে গড়ে সব মিলিয়ে ১৫০ কর্ম দিবসের সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে।

গত ২৭ জানুয়ারি এনসিটিবির কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বৈঠক হয়। সেখানে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষকরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মার্চ-এপ্রিলে খোলার পর ক্লাসে পুরো সিলেবাস পড়ানো হবে কি না। এ অবস্থায় ক্লাসের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হবে কি না।

পুরো বছরের সিলেবাস ৮ বা ৯ মাসে শেষ করা যাবে না। তাই সব ক্লাসের সিলেবাস পরিমার্জন করা হবে। এজন্য এনসিটিবির একটি কমিটি কাজ করছে। পরিমার্জিত যে সিলেবাস প্রকাশ হবে তার ওপর ভিত্তি করেই পরীক্ষার প্রশ্ন হবে

ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী

মন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর এনসিটিবি সব শ্রেণির জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২১ শিক্ষাবর্ষ ৮ বা ৯ মাস হবে এমনটি ধরেই ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা কাজ শুরু করেছি। সেজন্য চলতি শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস ছোট করা হয়েছে। এপ্রিলে স্কুল খুললেও সেভাবেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। অনুমোদন হওয়ার পর এটা প্রকাশ করা হবে।

জানা গেছে, এনসিটিবি প্রণীত এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো তারিখ রাখা হয়নি। কত কর্ম দিবসে ক্লাস শেষ করা যাবে, সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে।

এসব শ্রেণিতে কত শতাংশ সিলেবাস কমেছে তা স্পষ্ট না করলেও এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। যেমন- সপ্তাহে বাংলা ক্লাস থাকে পাঁচ দিন। আবার গণিত ক্লাস থাকে তিন দিন। এভাবে সব মিলিয়ে ১৫০ কর্ম দিবসের সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে।

দ্বিধা দ্বন্দ্বে জেএসসি পরীক্ষার্থীরা
পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস থাকলেও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যারা এ বছর জেএসসি পরীক্ষা দেবে, তাদের সপ্তাহে একদিন ক্লাসে আসতে হবে। এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে এ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। একদিনের ক্লাসে তারা কতটুকু সিলেবাস শেষ করতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির একজন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুল খোলার পর জেএসসি শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাসে আসতে হবে এমন ঘোষণা দেওয়া হবে।

পরীক্ষার্থী ব্যাচকে অগ্রাধিকার 
এক বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাচগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য পরীক্ষার্থী ব্যাচ যেমন পিইসি, এসএসসি ও এইচএসসিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেজন্যে এ তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাসে আসতে হবে।

এদিকে শিক্ষার সার্বিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চলতি শিক্ষাবর্ষে পাঠদান করা হবে। এমনকি ২০২২ সালে ৩০ শতাংশ কম সিলেবাসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে এনসিটিবি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করেছেন। আর গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রাথমিকের সিলেবাসও পুনর্বিন্যাস শেষে নতুন করে আবার প্রকাশ করা হবে।

স্কুল খুললেও ভার্চুয়াল ক্লাস চলবে
এক বছরের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ভার্চুয়াল ক্লাস চললেও তাতে শতভাগ শিক্ষার্থীকে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। আর এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই এনসিটিবি প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে। এরমধ্যে পিইসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের সপ্তাহ ছয় দিন ক্লাস হবে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহ একদিন ক্লাস থাকবে এবং পুরো সপ্তাহে হোমওয়ার্ক বা পড়া নিয়ে যাবে। তবে এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইন ও টেলিভিশন ক্লাস যথারীতি চলবে।

প্রাথমিকের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পুনর্বিন্যাস হবে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শ্রেণীকক্ষে কতটুকু পাঠদান করানো যাবে তা নিয়ে প্রাথমিকের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে এনসিটিবি। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) পরামর্শে এ সিলেবাসে করোনা পরবর্তীতে স্কুল খোলার পর কতটুকু পাঠদান করানো যাবে তা ঠিক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ মার্চ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি (রোববার) প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পুনর্বিন্যাস করা পাঠপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ মার্চ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ক্লাসের হিসাবে এ পাঠপরিকল্পনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে এ সিলেবাস ১ মার্চের বদলে ৩০ মার্চ থেকে করা হচ্ছে। করোনায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মতো প্রাথমিকের জন্যও এ পুনর্বিন্যাস পাঠপরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, স্কুল খোলার পর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যতটুকু সিলেবাস পড়ানো সম্ভব সে চিন্তা মাথায় রেখেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে এনসিটিবি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, প্রাথমিক স্তরের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। কয়েকটি ধাপে এ সিলেবাস করা হবে। যখন স্কুল খোলা হবে ওই সময় থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো শুরু হবে। এ সিলেবাস শুধু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য করা হচ্ছে। বাকি শ্রেণিগুলোতে শিক্ষকরা যতটুকু পড়াতে পারবেন, ঠিক ততটুকুর ওপর মূল্যায়ন করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ ব্যাপারে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) প্রফেসর ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ১ মার্চ থেকে স্কুল খুলবে ধরে নিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছিলাম। মার্চের ৩০ তারিখ খুললে শুধু পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নিয়মিত হবে। অন্য শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে একদিন করে হবে। সে অনুযায়ী নতুন করে পাঠপরিকল্পনা করা হবে। 

কতটুকু সিলেবাস কমানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারিকুলামের নিয়ম নীতি অনুযায়ী নেপ ও এনসিটিবি মিলে এটা করবে।

এনএম/ওএফ