গাজী মিজানুর রহমান

৪১তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার তারিখ ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে পিএসসি। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে  ১৯ মার্চ, দেশের আট বিভাগীয় শহরে। সেই হিসাবে পরীক্ষার মাত্র ১৪ দিন বাকি আছে। পরীক্ষার আগের এই ১৪ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিন। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়, ১৯ মার্চ ২০২১ সালের শুক্রবারের সকাল ১০টা থেকে ১২টা; এই দুই ঘণ্টা।

এই দুই ঘণ্টার চ্যালেঞ্জটুকু ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারলে আপনার জীবন বদলে যেতে পারে। হয়ে যেতে পারেন সরকারি ফার্স্টক্লাস অফিসারের একজন পথযাত্রী। যদিও বিসিএস প্রিলি পাস করলেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন; বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। তবে মনে রাখতে হবে, বিসিএস হওয়ার স্বপ্ন পূরণের এটিই প্রথম ও ক্রিটিক্যাল ধাপ। কারণ এই ধাপে বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করবে; প্রিলি পাস করতে না পারলে পরের ধাপগুলোতে যাওয়া যাবে না। প্রিলি পাস করলেই বাকিগুলো পাস করা তুলনামূলক সহজ।

তো এখন প্রশ্ন হলো, এই মুহূর্তে কি কি পড়া উচিত আর কি কি করা উচিত? আমি বলব, আপনার প্রস্তুতি খারাপ বা অসম্পূর্ণ এই মুহূর্তে এটা মাথায় আনবেন না। আপনি এতদিন কি কি পড়তে পারেন নি বা কি কি পড়া শেষ করতে পারেননি; সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, এই পর্যন্ত যতটুকু পড়েছেন তার কতটুকু পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত ধরে রাখতে পারছেন; সেটাই বড় কথা।
তাই যা পড়তে পারেননি, তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে নিজের প্রতি নিজে আস্থা রাখুন, ‘আমি পারব, আমাকে এই প্রিলি পাস করতেই হবে।’

সেজন্য প্রস্তুতি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে এখন শুধু গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বারবার রিভিশন দিন। বিশেষ করে যে, টপিকগুলো পরীক্ষায় বারবার আসে। কিন্তু ভুল বেশি হয়, এমন কমন টপিকগুলোর কথা বলছি। যেমন- English Preparation, Phrases & Indioms, সাধারণ ও বাংলায় বিভিন্ন সাল ও নাম ইত্যাদি।

আমি আবারও বলছি, আপনি এই মুহূর্তে শুধু বিসিএস প্রিলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন টপিকগুলো বারবার পড়ুন (কোন কোন টপিকগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার জন্য ‘BCS Preliminary Analysis’ বইয়ে প্রদত্ত সাজেশনটি ফলো করলে বেশি উপকৃত হবেন।

১) গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বারবার এজন্য পড়বেন, কেননা এই টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন থাকবে নিশ্চিত। কমনও পাবেন অনেক, কিন্তু পরীক্ষার হলে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে নেগেটিভ মার্ক আপনার লালিত স্বপ্নকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।

২) সাম্প্রতিক সব না পড়ে কেবল পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়ুন। বাজারে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের অনেক বই পাবেন, কিন্তু সেখানে ভুলের পরিমাণ অনেক বেশি। তার চেয়ে বড় কথা হলো এসব বইয়ে অপ্রয়োজনীয় তারিখ ও ঘটনার বর্ণনা দেওয়া আছে। আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, কোন তারিখ আর কোন সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। (সেজন্য ‘BCS Real Model Test’ বইয়ের প্রথম অংশে যে সাধারণ জ্ঞান আছে তা পড়ে নিতে পারেন। এই বইয়ে অপ্রয়োজনীয় তারিখ যা পরীক্ষায় আসার মতো না, তা পরিহার করা হয়েছে ও অপ্রয়োজনীয় সাম্প্রতিক তথ্য পরিহার করা হয়েছে।)

৩) চাইলে যেকোনো ভালো একটি মডেল টেস্ট বই থেকে দুটি মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে দেখতে পারেন, কত পান দেখুন। যে বিষয়ে কম পান সে বিষয় ভালো করে পড়ুন।

৪) অংক বা ইংলিশ অথবা দুটি বিষয় নিয়ে যাদের চিন্তা বেশি, সেই চিন্তা বাদ দিন। কারণ প্রিলিতে অংক ১৫ নম্বর মাত্র, ইংলিশ ৩৫, মানে মোট ৫০। সেখান থেকে মাঝারি মানের পরীক্ষার্থীরা অনায়াসে ২০-২৫ পেয়ে থাকেন সাধারণত। বিসিএস প্রিলিতে আলাদাভাবে পাস করতে হয় না, সবমিলিয়ে ১২০ নাম্বারের মতো পেলেই আপনি নিরাপদ জোনে থকবেন, আশা করা যায়। সাধারণ জ্ঞানের একটি প্রশ্নে জন্য যেমন ১ নম্বর পাবেন, আবার বড় একটি অংকের জন্য ১ নম্বরই পাবেন।

৫) Vocabulary মনে না থাকলে এখন শুধু বিগত সালে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা Vocabulary গুলো MCQ আকারে পড়ুন, মনে থাকবে বেশি এবং কমনও পাবেন আশা করি।

৬) পরীক্ষার আগের দিন অন্তত আপনার মতো যে, বিসিএস পরীক্ষার দেবে এমন একজনকে বেছে নিয়ে একজন, আরেকজনকে শুধু পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সাল তারিখ, নামগুলো জিজ্ঞেস করে আলোচনার মাধ্যমে পড়লে ভালো ফল পাবেন পরীক্ষার হলে। কারণ এভাবে মনে বেশি থাকে। (আমি তাই করতাম আমার রুমমেটের সঙ্গে)

৭) পরীক্ষার হলে আমার মতে সাধারণ জ্ঞান বা বাংলা দিয়ে উত্তর শুরু করা উচিত; সাধারণ গণিত সবার পরে উত্তর করা উচিত। কারণ সাধারণ জ্ঞানে বেশি নম্বর উঠাতে পারলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। গণিত যত ভালো পারুন না কেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে ২-১ বড় বা ঝামেলাপূর্ণ গণিত থাকেই। গণিত করতে গিয়ে সময় বেশি চলে গেলে পরে সময়ের চিন্তা মাথা গরম হয়ে গেলে পরীক্ষা আর ভালো হবে না।

৮) অপশনে যদি সঠিক উত্তর না থাকে প্রচলিত উত্তরটি করে আসবেন। যেমন দিলো ‘রঙ্গিন টেলিভিশন থেকে কোন রশ্মি বের হয়? সঠিক উত্তর: মৃদু রঞ্জন রশ্মি না থাকলে, প্রচলিত উত্তর; গামা রশ্মি’ দিয়ে দেবেন। কারণ তখন বুঝতে হবে প্রশ্নকর্তা এখানে গামা রশ্মিকে সঠিক উত্তর ধরে প্রশ্নটি করেছেন। তাই প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর করাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

৯) দুটি বা তিনটি উত্তর সঠিক থাকলে সবচেয়ে প্রচলিত উত্তরটি দেবেন। যেমন-নিজের কোন উপজাতিটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবার? ক। মারমা গ। খাসিয়া। গ। সাঁওতাল ৪। গারো। এখানে অপশন (ক) ও (গ) দুটিই সঠিক। কিন্তু বেশি প্রচলিত হলো ‘মারমা’। তাই এখানে ‘মারমা’ উত্তর করাই শ্রেয়।

১০) প্রশ্নে ভুল থাকলে; যেমন টাইপিং বা প্রিন্টিং ভুল, সেটা বোঝা গেলে সেই প্রশ্ন ধরে উত্তর করবেন।

১১) পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম হওয়া আবশ্যক। না হয় পরীক্ষার হলে মাথা কম কাজ করতে পারে।

১২) পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্তত এক ঘণ্টা আগে পৌঁছার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে সঙ্গে বই নিয়ে কেন্দ্রে সামনে পড়বেন। আমি এখানে আমার ৩৪তম-৪০তম (৩৯তম স্পেশাল বিসিএস ব্যতীত) টানা পাঁচ বিসিএস প্রিলি পাস করার অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করলাম। এ দিয়ে কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক। ধন্যবাদ সবাইকে।

গাজী মিজানুর রহমান, ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার

এএম