বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটির বর্ষপূর্তি হলো আজ (১৬ মার্চ-মঙ্গলবার)। দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালের ১৬ মার্চ।

ওইদিন শিক্ষামন্ত্রী দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেন। প্রথম দফা ১৫ দিন অর্থাৎ ওই বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সেই ছুটি দফায় দফায় বাড়িয়ে এখনও চলছে। গত বছর জুন থেকে আস্তে আস্তে সব কিছু খুলে দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকে সরকার। তবে বন্ধের এ সময় অনলাইন, সংসদ টিভি, বেতারসহ বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ক্লাস চলমান ছিল। 

মাঝে সংক্রমণ কমে আসায় আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু ইতোমধ্যে সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সেই তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখে দিয়েছে। নতুন করে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের ঊর্ধ্বগতির কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করেছে।

এদিকে, সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। এর আগে শুক্রবার (১২ মার্চ) শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনা শনাক্তের হার বাড়তে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।

তবে ঘোষিত তারিখের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সব ধরনের প্রস্ততি শেষ করতে তোড়জোড় চালাচ্ছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী, কিন্ডার গার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তুরের শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী টিকা গ্রহণ করেছেন। আগামী ২০ মার্চের মধ্যে সবাইকে টিকা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই ভাবে অন্যান্য স্তুরের শিক্ষক কর্মচারীরা টিকা নিচ্ছেন।  

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মরত এমন ৪০ বছরের কম বয়সী শিক্ষক কর্মচারীর টিকাসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও অ্যাপসে যুক্ত করতে বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র (নম্বর) সংগ্রহের কাজ চলছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যত ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন সব প্রস্ততি আমাদের রয়েছে। সরকারের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে যেতে প্রস্তুত শিক্ষক-কর্মচারীরা। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার যদি ছুটি বর্ধিত করে সেটি ভিন্ন বিষয়। তবে আমরা প্রস্তুত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় যে কয়টি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তারমধ্যে শিক্ষাখাত সবচেয়ে বেশি। ২০২০ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক সমাপণী, জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জেএসসি-এসএসসি গড় ফলাফলের ভিত্তিতে বিশেষ মূল্যায়ন করে ফল দেওয়া হয়েছে।

বাকি সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করে পরের শ্রেণিতে অটোপ্রমোশন দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের শিখন দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরের শ্রেণিতে তা সমাধান করতে এক মাসের সংক্ষিপ্ত অ্যাসাইমেন্ট নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর।

অন্যদিকে, করোনার কারণে ২০২১ সালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেজন্য এসএসসিতে ৩০ কার্যদিবস এবং এইচএসসিতে ৮০ কার্যদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে তা প্রকাশ করা হয়েছে। যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন সরাসরি শ্রেণিকক্ষে এ সিলেবাস পড়িয়ে তারপর পরীক্ষা নেওয়া হবে।

একই ভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হবে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে। পরীক্ষার্থী ব্যাচ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণির পরিমার্জিত সিলেবাস নিয়ে কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন থেকে এ পরিমার্জিত সিলেবাস পড়িয়ে সেখান থেকে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন করা হবে।

এনএম/এসএম