টেকসই পদ্ধতিতে শ্রমবাজারে ন্যায়সঙ্গত ও উৎপাদনশীলভাবে অংশগ্রহণে বাংলাদেশের নারী শ্রমশক্তিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন প্রধান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য যাত্রা শুরু করেছে প্রগ্রেস প্রকল্প। প্রকল্পটি আইএলও-এর কারিগরি সহায়তায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা বাস্তবায়িত হবে। কানাডা সরকার এ প্রকল্পের অর্থায়নকারী অংশীদার হিসেবে পাশে রয়েছে।

রোববার (১৯ মার্চ) রাজধানীর শেরাটন হোটেলে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়। প্রগ্রেসের সম্পূর্ণ নাম হলো, ‘প্রোমোটিং জেন্ডার রেস্পনসিভ এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টিভিইটি সিস্টেমস’।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার মিস লিলি নিকোলস। অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর ফারুক, আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, একটি কার্যকর কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি এবং দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের আত্মকর্মসংস্থান ও উপযুক্ত মজুরিতে তাদের সঠিক দক্ষতা বা স্কিলস নিয়ে শ্রমবাজারে প্রবেশে সহায়তা করতে পারে যা নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রকল্পটি বাংলাদেশে লিঙ্গসমতা অর্জনের জন্য সরকারের পরিকল্পনায় মূল্যবান প্রভাব ফেলবে, যা দারিদ্র্য হ্রাস করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। শ্রমশক্তিতে নারী কর্মীদের কম অংশগ্রহণের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা যথা মজুরি এবং কর্মসংস্থান উভয় ক্ষেত্রের পাশাপাশি নারীদের আত্মকর্মসংস্থান শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিষেবাগুলোতে যে সীমিত অ্যাক্সেস রয়েছে, তা ইতিবাচকভাবে মোকাবেলা করার জন্য এ প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে। এটি বাংলাদেশের নারী শ্রমশক্তির কর্মসংস্থানের উন্নয়নে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার সাথে সাথে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের অবদান সর্বাধিক করতে সহায়তা করবে। এছাড়া পলিসি অ্যাডভোকেসি, এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট এবং স্কিলস প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের ক্ষেত্রে তাদের পথকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সুগম করবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার মিস লিলি নিকোলস বলেন, টেকসই ও যথোপযুক্ত পদ্ধতিতে শ্রমবাজারে ন্যায়সঙ্গত ও উৎপাদনশীলভাবে অংশগ্রহণে বাংলাদেশের নারী শ্রমশক্তিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ ও বাধাগুলো মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য এ প্রকল্পটি ডিজাইন করা হয়েছে। এ প্রকল্পে উন্নত কারিগরি প্রোগ্রাম যাতে বাজারের চাহিদা পূরণ করে এমন প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ এবং উদ্যোক্তা স্কিলস ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রমবাজারে প্রবেশকারী তরুণরা তাদের পেশা ও সেক্টরের বিস্তৃত পরিসরে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো বিস্তৃত পেশায় উপযুক্ত কাজের সাথে নিযুক্ত বাংলাদেশের নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন, আইএলও চতুর্থ ডিসেন্ট ওয়ার্ক কান্ট্রি প্রোগ্রাম ২০২২-২৬ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে। যেখানে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লিঙ্গসমতা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অবসানের মাধ‌্যমে নারীর ক্ষমতায়ন। এ প্রকল্পটি ডিডব্লিউসিপির প্রধান স্তম্ভগুলোকে গুরুত্ব দেবে, যার মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অবসান। এ উদ্যোগের জন্য মোট বাজেট রয়েছে ২০ মিলিয়ন কানাডীয় ডলার। আইএলও ও বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২২ সাল থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করবে, যেখানে সহায়তা করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের পাশাপাশি এমপ্লয়ার্স এবং শ্রমিকদের সংগঠন।

এমএম/এফকে