মনিপুর স্কুলের ফটক ও ডানে ইনসেটে ঢাকা জেলার প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান

রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে অব্যাহতি দিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসককে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও অ্যাডহক কমিটির মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন হবে বলে ধারণা করছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

মঙ্গলবার (২৩ মে) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক স্বাক্ষরিত নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এতে ঢাকা জেলার প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে আলমগীর হোসেন, অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে জাকিয়া শিল্পী এবং পোষ্য কোটায় নুসরাত জাহান স্নেহাকে রাখা হয়েছে।  

এর আগে গত ১৮ মে প্রধান শিক্ষক নিয়ে ফের অস্থিরতা শুরু হয় মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বর্তমান প্রধান শিক্ষককে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। আর নতুন প্রধান শিক্ষককে অবৈধ ঘোষণা করে শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে পাল্টা নোটিশ দেয় বর্তমান প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে যান সাধারণ শিক্ষকরা। ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষকরা। বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে প্রায় ২০ জন শিক্ষক আহত হন। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মূল ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়ন করা হয়।

জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত দেলোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সাবেক প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনকে বহাল রাখতে চায়। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনকে নিয়োগ দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ দেয় অধিদপ্তর। এরপর তাকে কয়েক দফা যোগদান করতে বাধা দেয় বর্তমান অ্যাডহক কমিটি।

এরপর ঢাকা বোর্ডের নির্দেশনা না মানায় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলে তিনি বোর্ডের কাছে লিখিত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান। তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা, বিভিন্ন কেনাকাটায় বড় অঙ্কের কমিশন আদায়, নিজের লোক দিয়ে স্কুলের কাজ করিয়ে ইচ্ছেমতো বিল আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতার স্লিপে স্বাক্ষর না করায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন তুলতে পারছেন না বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে তদন্তের জন্য গত ৯ মে প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরকে (ডিআইিএ)  চিঠি দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এর আগে ডিআইএ’র অপর এক তদন্তেই সাবেক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ পায়।

এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনেও সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মনিপুর স্কুল থেকে ৭ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গভর্নিং বডির বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা দুর্নীতির কারণে রাজধানী ভিকারুননিসা ও আইডিয়াল স্কুলে ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে আছেন আমলারা। দীর্ঘদিন ধরে আইডিয়াল স্কুলে আছেন বর্তমান ডাক ও টেলিযোগযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান এবং ভিকারুননিসা দায়িত্বে আছেন ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান।  

এনএম/জেডএস