অবসরে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) তার শেষ কর্মদিবস। তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে এখনো নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়নি সরকার। ফলে নতুন চেয়ারম্যান না দেওয়া পর্যন্ত এই পদে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা ঠিক করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী রোববার এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে  শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার চেয়ারম্যান পদটি শিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয়। জানা গেছে, এ পদে নিয়োগ পেতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা ও সাবেক উপাচার্যদের মধ্যে ১৩ জন দৌড়ঝাঁপ করেছেন। তবে চমক দেখাতে এবার ওই চার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও চেষ্টা করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য প্রফেসর হারুন-অর রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য ড. মীজানুর রহমান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য প্রফেসর ফারজানা ইসলামকে চেয়ারম্যান হিসেবে নাম প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কাতার সফরের কারণে এই ফাইলের সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তবে শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে শিক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবু ইউসুফ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান নিয়োগের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এটা শিক্ষামন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এ বিষয়ে জানতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে একাধিকার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।  

আলোচনায় যারা

বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য ও অধ্যাপক ড. এম শাহ নওয়াজ আলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, সরকারি কর্ম-কমিশনের সাবেক সদস্য শরীফ এনামুল কবির।

এছাড়া এ পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন কমিশনের বর্তমান তিনজন সদস্য। তারা হলেন- অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম, অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম. ওয়াহিদুজ্জামানও রয়েছেন এ দৌড়ে।

আলোচনায় এগিয়ে যারা

এক ডজনের বেশি শিক্ষক দৌড়ঝাঁপ করলেও চেয়ারম্যান পদের মূল আলোচনায় আছেন সাতজন। এর মধ্যে শীর্ষে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের ভিসি ও সাবেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আরেফিন সিদ্দিক। তিনি আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবী ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সরকারের যেকোনো দুঃসময়ে তিনি বিবৃতি, মানববন্ধন করে সামনে থাকেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। 

এরপর আছেন এক-এগারোর সময় কারাভোগ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপ-উপাচার্য আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নেতা ও বুদ্ধিজীবী।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক মীজানুর রহমানও আলোচনায় এগিয়ে আছেন। যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও তিনি আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত।

ইউজিসির প্রথম নারী চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও সরকারের শীর্ষমহলের সদয় দৃষ্টি রয়েছে। 

সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের চেয়ারম্যান এ কে খন্দকারের ভাই বজলুল হকও আছেন আলোচনায়। গতবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যে ছয়জনের তালিকা পাঠানো হয় সেখানে তার নামও ছিল। আলোচনায় আছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও ইউজিসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. এম শাহ নওয়াজ আলী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদও। 

যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় চেয়ারম্যান

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের চেয়ারম্যান পদে আগ্রহী শিক্ষকরা তাদের বায়োগ্রাফি (জীবনবৃত্তান্ত) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জমা দেন। মন্ত্রণালয় থেকে সেই তালিকা ও জীবনবৃত্তান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সেই তালিকা যাচাই-বাছাই, গোয়েন্দা প্রতিবেদন, শিক্ষকতা জীবনে তিনি কোন মতাদর্শের ছিলেন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সততা- এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে পাঠান। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আবার তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে।

ইউজিসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান পদটি হাইপ্রোফাইল একাডেমিক ও রাজনৈতিক পদ। এ পদে জোর তদবির চলে। এ তদবিরে যিনি এগিয়ে যান, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নজর কাড়তে পারেন, তিনিই এ পদে আসীন হন। এজন্য সবাই নিজস্ব লবিং দিয়ে চেষ্টা করেন।

এনএম/জেডএস