বহুকাঙ্ক্ষিত বেসরকারি স্কুল ও কলেজের সংশোধিত এমপিও নীতিমালা- ২০২১ ও জনবল কাঠামো জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রায় দেড় বছর সংযোজন-বিয়োজনের পর নীতিমালাটি জারি করা হলো। ফলে যেকোনো মুহূর্তে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন নিতে আর কোনো বাধা রইল না।

সোমবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে নীতিমালাটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়- ২) ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক মোমিনুল রশিদ আমিন এবং একই বিভাগের উপসচিব মো. কামরুল ইসলাম। এটি ২০১৮ সালের নীতিমালার ‘সংশোধিত নীতিমালা’ হিসেবে পরিগণিত হবে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের নীতিমালাটি বাতিল হয়ে যাবে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সংশোধনী নীতিমালা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই গত ডিসেম্বর মাসে জারি হয়। তবে জনবল সংশোধন হওয়ায় নীতিমালাটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া জারি করায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালে সর্বশেষ ২৬৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালাটি আরও যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটি চূড়ান্ত করে। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য এটি পাঠানো হয়। সোমবার আলোর মুখে দেখে নীতিমালাটি।

৪৪ পাতার নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেড পাওয়ার ১০ বছর পূর্তিতে দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেড পেয়ে সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাবেন। উচ্চমাধ্যমিক কলেজের প্রভাষকরা এমপিওভুক্তির আট বছর পূর্তিতে মোট পদের ৫০ শতাংশের মূল্যায়নের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পাবেন। ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হবে তাদের।

ডিগ্রি কলেজের প্রভাষকরা চাকরির আট বছর পূর্তিতে মোট প্রভাষক পদের ৫০ শতাংশ নির্ধারিত সূচকে মোট ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন।

প্রসঙ্গত, ৩০ মার্চের আগে স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা প্রকাশ এবং চলতি অর্থবছরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছিল নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদ।

জানা যায়, ২০১৮ সালের নীতিমালাটি দীর্ঘ দেড় বছর ধরে সংযোজন-বিয়োজন করে চূড়ান্ত মতামত নেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৪ মার্চ সাতটি সংশোধনী দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তা ফেরত পাঠায়।

অর্থ বিভাগের উপসচিব তনিমা তাসনিমের দেওয়া চিঠিতে মানসম্মত ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে এবং সরকারের বাজেট বরাদ্দের ভারসাম্য রক্ষায় সব শিক্ষক-কর্মচারী একসঙ্গে নিয়োগ না দিয়ে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী (প্রস্তাবিত) পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দিতে বলা হয়।

এছাড়া সিটি করপোরেশন, জেলা সদর ও পৌরসভায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের পদবহির্ভূত অতিরিক্ত কর্মচারীর পদ (যেমন- অফিস সহায়ক, নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী ও আয়া) নতুনভাবে সৃষ্টি না করে প্রয়োজন সাপেক্ষে নিজস্ব অর্থায়নে নিয়োগের বিধান রাখতে বলা হয়।

তবে মফস্বল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কম থাকায় প্রস্তাবিত নীতিমালায় শুধু এসব এলাকার ক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-অষ্টম), মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-দশম) এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (ষষ্ঠ-দ্বাদশ) ‘অফিস সহায়কের’ একটি করে নতুন পদ অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘জনস্বার্থের গুরুত্ব বিবেচনায় এমপিওভুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আদেশ দিতে পারবেন’— এই বিধানের পরিবর্তে এমপিও নীতিমালা ও বাজেট বরাদ্দের আলোকে শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটির যাচাই-বাছাইপূর্বক সুপারিশের ভিত্তিতে এমপিওভুক্তির বিধান রাখতে হবে।

এছাড়া নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অন্যান্য শর্তাবলির সঙ্গে হালনাগাদ স্বীকৃতির/অধিভুক্তির শর্ত বহাল রাখতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ে নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শুধু নারীদের জন্য পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ/স্নাতক (পাস) কলেজের জন্য কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের মতো আনুপাতিক হারে কম রাখতে হবে।

বর্তমানে ৭৫ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাপ্যতা রয়েছে। নতুন শর্তে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ জনসংখ্যা ৬৫ হাজারে সীমিত করতে এবং চারটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ঐচ্ছিক) প্রস্তাবিত তৃতীয় শিক্ষকের পদ সৃজন না করতে বলা হয়েছে।

এনএম/এমএআর/