সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০২১ জারি করার পর  শিক্ষক-কর্মচারীরা শতভাগ ঈদ বোনাস পাচ্ছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ খবর শুনে শিক্ষক নেতাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘উল্লাস ও উচ্ছ্বাস’ প্রকাশ করেছেন। 

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন নীতিমালায় শতভাগ বোনাস দেওয়ার খবরটি সত্য নয়। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিমূলক। নীতিমালা সংশোধন করার সঙ্গে ‍যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ হারে যে ঈদ বোনাস পান, সেভাবেই পাবেন। 

বিষয়টি নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি তৈরি না করতে সবার প্রতি অনুরোধ করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বুধবার (৩১ মার্চ) তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। সদ্য জারি করা এমপিও নীতিমালার কোথাও শতভাগ বোনাস ও উৎসব ভাতা পাবেন এটা বলা নেই। তারপরও অনেকেই বলছেন, শতভাগ বোনাস পাবেন শিক্ষকরা। শতভাগ বোনাস পাওয়ার খবরটি সত্য নয়।

সচিব বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে সবার আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির প্রয়োজন। যেহেতু নীতিমালায় শতভাগ বোনাস ও উৎসব ভাতার কথা বলা হয়নি, তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নেওয়ারও প্রয়োজন হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংশোধিত এমপিও নীতিমালার জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুল রশিদ আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে। নীতিমালায় বলা ১১.৭ এর উপধারা ‘ঙ’ তে উল্লেখ করা হয়েছে ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন/বোনাসের নির্ধারিত অংশ /উৎসব ভাতার নির্ধারিত অংশ /বৈশাখী ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫/সরকারের সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সাথে অথবা সরকারের নির্দেশনার সাথে মিল রেখে করতে হবে’। অর্থাৎ এখন যে ২৫ শতাংশ হারে বোনাস ও উৎসব ভাতা পান সেভাবেই তারা পাবেন।

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যদি শতভাগ বোনাস ও উৎসব ভাতা দেওয়া হতো তাহলে বেতন/বোনাসের নির্ধারিত অংশ বলা হতো না। কারণ সরকারি কর্মকর্তারা শতভাগ বোনাস পান। তাদের ক্ষেত্রে কি বলা হয়, বেতনের নির্ধারিত অংশ বোনাস পাবেন? তার মানে যারা শতভাগ বোনাস পান তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ বলার প্রয়োজন নেই।  

তিনি বলেন, এ ধরনের আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের মতামত নিতে হবে। যেহেতু আমরা এ ধরনের কোনো প্রস্তাব করিনি তাই অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।

সারাদেশে ২৮ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪ লাখ ৬ হাজার ৪৬৯ জন শিক্ষক এবং ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬১ জন কর্মচারী রয়েছেন। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ ঈদ বোনাস পান। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা পান। দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।

এনএম/আরএইচ