ফাইল ছবি

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জন নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য ৭৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এ টাকা বিতরণ করতে গিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

বরাদ্দ অনুযায়ী করোনা মহামারির মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়া প্রত্যেক শিক্ষক পাবেন ৫ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারী পাবেন আড়াই হাজার টাকা করে। গত বছর অনুদানের অর্থ শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গেলেও এবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে সরকারের যুক্তি ছিল, অনুদানপ্রাপ্ত একজনের টাকা যেন অন্যজন উঠিয়ে নিতে না পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর দেওয়া বিকাশ ও নগদ নম্বরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম না মেলায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। 

এবারের বাজেটে নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য থাকছে সুখবর
এবারের বাজেটে নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য এবং বাকি ১০০ কোটি টাকা কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব রাখছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, যে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর এই অনুদান পাওয়ার কথা, তার মধ্যে ২০ মে পর্যন্ত অনুদান পেয়েছেন মাত্র ১৪ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬৭৭ জন নন-এমপিও শিক্ষক, ২৩১ জন নন এমপিও কর্মচারী এবং ৬ হাজার ১৩৮ জন মাদরাসা শিক্ষক আছেন। বাকি এক লাখ ৫৩ হাজার ১৭৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর এ সহায়তা পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

বাকিদের প্রকৃত নাম মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে দেওয়া নামের সঙ্গে মিলছে না। ফলে তাদের জন্য বরাদ্দ অর্থ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, থাকলেও নানান ভুল, আবার অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী নয়। ফলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট না থাকা এ শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিচিত অন্য কারো অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছেন। এসব নম্বরে টাকা পাঠাতে গিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় দেখে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ব্যবহৃত নামের সাথে ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের নামের মিল নেই।

এ অবস্থায় কী করা হবে তার সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে অর্থ মস্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।  

বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারিতে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারের বিশেষ অনুদান পেতে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার কারণ এ শিক্ষক-কর্মচারীদের নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট না থাকায় তারা অন্যের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছেন। আর এতে নাম নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরও নন এমপিও শিক্ষকদের অনুদানের টাকা দেয় সরকার। এ অনুদানের টাকা নেওয়ার জন্য  শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলা হয়। অ্যাকাউন্ট খোলার চার্জ, এককালীল জমা সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা রাখা এবং যাতাযাত খরচ বাবদ একেকজনের প্রায় দেড় হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। এবার হঠাৎ করে সরকার বলল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ টাকা দেওয়া হবে। এতেই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। 

নন এমপিও শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেজন্য প্রকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য খুঁজে বের করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (ব্যানবেইস)।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বেশিরভাগ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মফস্বল অঞ্চলে অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা নেই। অনেকেরই আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, অনেকের পরিচয়পত্রে ভুল। এসব কারণে বেশিরভাগ শিক্ষক-কর্মচারী অন্যের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছেন।  

এ ব্যাপারে গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, সরকারের নন-এমপিও শিক্ষকদের সমস্যার কথা বোঝা উচিত। কারণ, মফস্বল অঞ্চলের একজন নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী কোনো দিন সরকারি বেতন-ভাতা পান না। তাদের ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট করার কোনো প্রয়োজন হয়নি। তারপরও গত বছর সরকারের অনুদান নেওয়ার জন্য দেড় হাজার টাকার বেশি খরচ করে তারা অ্যাকাউন্ট খুলেছে। তাই আমাদের দাবি, গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের চেকের মাধ্যমে অনুদানের অর্থ প্রদান করেছিল, এবারও যেন তাই করা হয়।

করোনা মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষকরা। যাদের বেতন ভাতা হতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় থেকে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের বেতন-ভাতায় ভাটা পড়ে। অনেক জায়গায় বেতন প্রায় বন্ধ। এতে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। 

গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষককে ৫ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীকে আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছর এ খাতে সরকার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল।  

এনএম/এনএফ/জেএস