শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে করোনা সংক্রমণের হার না কমলে ছুটি ফের বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সরকারি বিধিনিষেধ ও ঈদুল আজহার সঙ্গে মিলে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও এক মাস বাড়তে পারে। সে হিসেবে আগামী জুলাইয়েও খুলেছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

রোববার (২০ জুন) সকালে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাঝে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ সংক্রমণ ও মৃত্যুর দুটিই বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। 

৩০ জুনের পর ছুটি কতদিন বাড়তে পারে- জানতে চাইলে সচিব জানান, চলতি সপ্তাহ করোনা মোকাবিলায় সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।    

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২২ বা ২৩ জুলাই ঈদুল আজহা। ৩০ জুনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি পুরো জুলাই মাস দেওয়া হতে পারে। সে হিসেবে জুলাই মাসেও খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।   

ঈদের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা সচিব বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে সেটা জানি। কবে খুলবে তার নিদিষ্ট কোনো তারিখ এ মুহূর্তে বলা যাবে না। কারণ এর আগেও দুবার তারিখ ঘোষণার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি। তাছাড়া এই মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। তাই আপাতত কোনো কিছুই বলা সম্ভব না।

জানা গেছে, দেশে চলমান করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৩০ জুনের পর স্কুল-কলেজ খোলা হবে নাকি চলমান ছুটি আরও বাড়বে সে বিষয়ে ২৫ জুনের পর সিদ্ধান্ত জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা প্রতিদিন করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে না আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না। বর্তমানে সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। এই অবস্থায় স্কুল-কলেজ খোলার ঝুঁকি নিতে চায় না মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা দেশের স্কুল-কলেজ ৩০ মার্চ খুলে দেওয়া হবে। আর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৪ মে থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।’ 

কিন্তু এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার সেই ঘোষণা মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভব হয়নি।

দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা কমার পর গত ২৬ মে ফের শিক্ষামন্ত্রী জানান, পর্যায়ক্রমে ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তার এ ঘোষণার পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ায় কয়েকটি জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়। এরমধ্যে সারাদেশে বাড়তে থাকে সংক্রমণের হার। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়।

বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় এ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ১২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর নোটিশ দিয়ে বলেন, এ সময়ে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ি ও কওমি মাদরাসা বন্ধ থাকবে।

এনএম/ওএফ