হল না পাওয়ায় গণরুমে শিক্ষার্থীদের অবস্থান/ ফাইল ছবি

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়। অক্সফোর্ডের মডেল নিয়ে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যা আজ (১ জুলাই) শতবর্ষ পেরিয়ে পা দিয়েছে ১০১তম বর্ষে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশের শীর্ষ এই বিদ্যাপীঠের প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় তা নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাবি কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আবাসন সমস্যা শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠের ‘অভিশাপ’ হয়ে রইল।

প্রতিবছর সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রতিবছরই সমস্যায় পড়তে হয়। সমস্যা নিরসনে আবাসিক হল বাড়ানোর বা ভারসাম্য বজায় রেখে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কোনো দৃশ্যমান ভূমিকাও দেখা যায় না কর্তৃপক্ষের। শিক্ষার্থীরা বারবার এ সংকট থেকে মুক্তি চাইলেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হল ও তিনটি হোস্টেলে বর্তমানে আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে ১৫ হাজার ২৫৯ জনের। বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬৪ জন। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নেই।

আমরা সমস্যার সমাধান নিয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানের বড় অংশ জুড়ে আছে আবাসন সংকটের সমাধান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শতবর্ষী একটা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে সম্পূর্ণ আবাসিক সুবিধা দিতে পারে। এছাড়া আবাসিক সুবিধার আলোকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। শুধুমাত্র সদিচ্ছার অভাব এবং রাজনৈতিক কারণে এ আবাসন সংকট তৈরি করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য শিক্ষার্থীদের। তবে নতুন হলসহ আবাসিক হলগুলোর ভবন সম্প্রসারণে একটি মাস্টারপ্ল্যান এরইমধ্যে প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়। এর ফলে আবাসন সংকট অনেকটা দূর হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তবে এর থেকে বড় আফসোস ও লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। গৌরবময় এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে এক ঐতিহাসিক অতীত ও সাফল্যমণ্ডিত বর্তমান। এই সুনাম ও খ্যাতি বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত আবাসন সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। করোনা সংকট কাটিয়ে আমরা যেন পুনরায় প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরতে পারি, দুর্নীতি ও পক্ষপাতহীন পরিবেশে যেন শান্তিতে ও আনন্দের সঙ্গে অবস্থান করতে পারি, এটাই কাম্য।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল বাসার বলেন, প্রান্তিক পর্যায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই বলে স্বপ্ন ছিল হলে আমার একটি সুন্দর ঠিকানা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজও আমাকে মাথা গোঁজার ঠিকানা করে দিতে পারেনি।

পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা জানিয়ে আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুজ জাহের নিশাদ বলেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো আবাসন সংকট। শতবর্ষে প্রত্যাশায় জায়গা থেকে এটাই বলব, যাতে আমাদের মতো পরবর্তী ঢাবিয়ানদের আর এস এম হলের বারান্দায়, বঙ্গবন্ধু হলের টিভি রুম, এফ রহমান হলের ডাইনিং কিংবা গণরুমে থাকতে না হয়। আগামীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপেই আবাসন সংকটের সমাধান হচ্ছে বলে দাবি করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন তাদের আধিপত্য বজায় রাখতেই এ সমস্যা তৈরি করে রেখেছে। যখন যারা ক্ষমতায় তারা এর অপব্যবহার করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে পারে, কিন্তু এটি রাজনৈতিক সৃষ্ট সমস্যা। এর সমাধান চাইলে প্রথমে তাদের (ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন) আধিপত্যকে রুখে দিতে হবে।

আবাসন সংকটের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সমস্যার সমাধান নিয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানের বড় অংশ জুড়ে আছে আবাসন সংকটের সমাধান। এর আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য ‘জয় বাংলা হল’ ও ‘শহিদ এথলেট সুলতানা কামাল হল’ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করি এই সংকট আর থাকবে না।

এইচআর/জেডএস