‘ভুল উত্তরকে সঠিক করে’ ধরা খেলেন ভিকারুননিসার শিক্ষক
নিয়োগ পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ণ করতে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর ভুল উত্তরের ওপর ঘষামাজা করে সঠিক উত্তর লেখে দেন। এতে প্রার্থীর মোট নম্বর বেড়ে যায়। এভাবেই পছন্দের প্রার্থীকে রাজধানীর স্বনামধন্য ভিকারুননিসা স্কুলে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করে একটি চক্র। সেই কাজ করতে গিয়ে ধরা খেলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা জোহরা হক। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড।
একই অভিযোগে সম্প্রতি অপসারণ করা হয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়াকে। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে ফাতেমা জোহরার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দেন।
• অধ্যক্ষের নির্দেশে একজন পরীক্ষার্থীর খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেন ফাতেমা জোহরা।
• কমিটি তদন্তে খাতা মূল্যায়নে ঘষামাজার প্রমাণ পায়। এরপরই অধ্যক্ষ ফওজিয়াকে অপসারণ করে মন্ত্রণালয়।
• নম্বর বাড়ানোর দায় স্বীকার করেছেন ফাতেমা জোহরা।
• অভিভাবক ফোরামের অভিযোগ, নির্দেশদাতা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক পদ না থাকলেও নিজের লোককে অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে ভিকারুননিসার সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে তিনি ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন। সাধারণ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের একাংশকে দিয়ে খাতা মূল্যয়ন করান। সেখানে তিনি দায়িত্ব দেন ফাতেমা জোহরা হককে। অধ্যক্ষের নির্দেশে একজন পরীক্ষার্থীর খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেন ফাতেমা জোহরা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ হলে পরিচালনা পর্ষদের ওই সময়ের সভাপতির হস্তক্ষেপে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়।
এই ঘটনায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করে। এতে বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্য এবং অধ্যক্ষ নিজে স্বার্থসিদ্ধির জন্য পদ না থাকলেও পদ দেখিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রশাসনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন।
এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করে দেন। কমিটি তদন্তে খাতা মূল্যায়নে ঘষামাজার প্রমাণ পায়। এরপরই অধ্যক্ষ ফওজিয়াকে অপসারণ করে মন্ত্রণালয়।
একই অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে ওই পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা স্কুলের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা জোহরা হক। একজন প্রার্থীর খাতা ঘষামাজা করে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ মিলায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
মঙ্গলবার ইস্যু করা বোর্ডের চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী শিক্ষক ফাতেমা জোহরা হকের অবৈধভাবে খাতা মূলায়নের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে অভিযুক্ত শিক্ষক নিজেই খাতায় ভুল উত্তর কেটে শুদ্ধ উত্তর লিখে দিয়ে নম্বর বাড়ানোর দায় স্বীকার করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি নৈতিকভাবে এ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে গর্ভনিং বডি এবং অধ্যক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড।
এর আগে গত ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ারুল হক এই শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ভিকারুননিসায় স্কুলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নের সময় সংগঠিত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ফাতেমা জোহরা হকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অভিভাবক ফোরামের নেতারা অভিযোগে বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও এই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে চুপ থাকেন এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি দেন। অথচ এখন শুধু একজন শিক্ষককে পর্ষদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। অথচ খাতায় নম্বর বাড়ানোর নির্দেশদাতা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হলে সাবেক সভাপতিও এই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হবেন।
এনএম/এইচকে