ফাইল ছবি

মহামারির আধার কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে জীবন। হাতে এসেছে টিকা, বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও খোলার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে সরকারিমহল থেকে। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। 

বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ মাসের ৮ তারিখে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর ১৬ মার্চ সরকার প্রথম স্কুল, কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। এরপর দফায় দফায় সে ছুটি বাড়ানো হয়। বাতিল হয় ওই বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।  

এদিকে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পাচ্ছে। এরমধ্যে যতটুকু সিলেবাস পড়ানো হবে ততটুকু ওপর প্রশ্ন হবে এবং পরীক্ষা হবে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৩০ দিনে ক্লাস নেওয়া হবে। ক্লাস চলাকালীন কোন ধরনের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। এমনকি টেস্ট-পরীক্ষা না নিয়ে সবাইকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ দেওয়া হবে।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস নেওয়ায় বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার নম্বরও কমে আসবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের নামে ‘ঢাউশ’ সিলেবাস দেখে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হলে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী জরুরি সভা ডেকে সেটা বাতিল করে এসব সিদ্বান্ত নিয়েছেন।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে এনসিটিবিতে সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদিকদের বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হলে শিক্ষার্থীরা বলেছে অনেক বেশি। তাই তাদের অনুরোধে আমরা সেটাকে পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যদি মধ্য ফেব্রুয়ারিতে স্কুল খুলতে পারি তাহলে ঈদের আগে সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি বাদ দিলে ৬০ দিন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হবে।

এসএসসিতে ৬০ দিনে ৩৬০ ক্লাস
এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রথমে যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছিল সেটি বাতিল করে নতুন করে সিলেবাস তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার মন্ত্রী এনসিটিবির কর্মকর্তাদের বলেন, প্রতিদিন ৬টা ক্লাস ধরে মোট ৩৬০টি ক্লাস হবে। ১২টা বিষয়ে গড়ে সর্ব্বোচ ৩০টা ক্লাস ধরে সিলেবাস হবে। তবে বিষয়ের গুরুত্ব বুঝে বিষয়ভিত্তিক কম বেশি ক্লাস হতে পারে। যারা সিলেবাস প্রণয়ন করবেন তারা এটি ভাগ করে দেবেন, কোন বিষয়ে কয়টা ক্লাস হবে।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন বিষয়ে দীপু মনি বলেন, বিষয়ভিত্তিক যে কয়দিন ক্লাস হবে সেই সময়ে কতটুকু পড়ানো যায়, বা কতটুকু একজন শিক্ষার্থী পাঠ নিতে পারবে, নবম-দশম শ্রেণির পুরো সিলেবাসের কতটুকু জানা জরুরি সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাঠদান সাজানো হবে।

উদাহরণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এক সপ্তাহে একটা সাবজেক্টের তিনটি ক্লাস হলো- তিনটা ক্লাসে যতটুকু পড়ানো হলো কিংবা দেড় সপ্তাহ মিলে দুটো অধ্যায় শেষ হলো। তখন শ্রেণি শিক্ষক একটা ছোট পরীক্ষা নেবেন। তাতে শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এজন্য কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোনো ধরনের ফি নিতে পারবে না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঈদের পর ১৮ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে জুনে এসএসসি পরীক্ষার নেওয়ার রুটি দেওয়া হবে। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত স্কুলগুলো মক টেস্ট, প্রি-টেস্ট বা টেস্ট বা যেকোনো নামের কোনো টেস্ট পরীক্ষা নিতে পারবে না। শুধু ক্লাস হবে আর শ্রেণি কক্ষে শ্রেণি শিক্ষক এক-দুইটা অধ্যায়ের পাঠদান শেষে ক্লাসে পরীক্ষা নেবেন। সেজন্য কোনো ফি নেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীকে ফি দিতে বাধ্য করা যাবে না। এছাড়া বিষয়গুলোর শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের পাশাপাশি  বিকেলবেলা অনলাইনেও এই পাঠগুলো শিক্ষার্থীরা দেখতে পারবে। মন্ত্রী আরও বলেন, মে মাসের শেষের দিকে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান টেস্ট পরীক্ষা নিতে চায় তখনকার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত দিবো।

এইচএসসির ৮৪ দিন ক্লাস
এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি প্রায় শেষ হলেও এসএসসি কারণে সেটি পিছিয়ে যাচ্ছে। এনসিটিবি যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছিল সেটি আরও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যদি ১৫ জুন পর্যন্ত ক্লাস করানো যায় তাহলে ৮৪দিন ক্লাস পাবে। মোট ৫০৪টা ক্লাস হবে। গড়ে ৩৮টা ক্লাস পাবে। সেটাও সিলেবাস অনুযায়ী সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি ভাগ করে দেবেন।

কোন বিষয়ে কয়টা ক্লাস হবে এবং তাদের যে বিষয়গুলোতে ব্যবহারিক পরীক্ষা আছে সেগুলোতে ৯ মে এসএসসির এবং ১৫ জুন এইচএসসির জন্য ক্লাস শেষ হবে ধরে নিচ্ছি। তার পরের সময়টা স্কুলগুলো ব্যবহারিক করিয়ে নেবে। আর ব্যবহারিকের সিলেবাসও সংক্ষিপ্ত হবে।

পরীক্ষার বিষয় ভিত্তিক নম্বর কমবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেবাসের সঙ্গে পরীক্ষার সাবজেক্টের মানবণ্টন দিয়ে দেবো। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে না। তারপরও যদি কারো কোনো প্রশ্ন থাকে সেগুলো সময় সময় পরিবর্তনযোগ্য। আমি শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে চাই-আমাদের শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলুক আমরা তা চাই না। আমরা গত বছর কতটুকু ক্লাস করে বা এ বছর কতটুকু করেছে সেটি বিবেচনা না করে পুরো সিলেবাসকে সংক্ষিপ্ত করেছি।

সেক্ষেত্রে এসএসসির জন্য ৬০দিন ক্লাস আর এইচএসসির জন্য ৮৪দিন ক্লাস নির্ধারণ করেছি। আর শিক্ষার্থীদের যতটুকু ক্লাস বা পড়ানো সম্ভব হয়েছে ঠিক ততটুকুর ওপর পরীক্ষা নেওয়া হবে। ক্লাস নাইনে যেটুকু পড়েছে তেমন বিষয় এবং দশম শ্রেণিতে যেটুকু পড়েছে সেটুকুও থাকবে। তার মানে আমরা যে সিলেবাস দিয়ে দিচ্ছি এবং ক্লাস শুরু করছি- এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হয়ে পড়তে হবে।

করোনা কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবি এনসিটিবি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে মাসব্যাপী কর্মশালা করে একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করে। সেটি গত সোমবার শিক্ষাবোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সেটা দিখে হতাশ হন পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। 

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ফোন দিয়ে ওই সিলেবাস নিয়ে আপত্তি জানান। শিক্ষকদের অভিযোগ, যেসব অধ্যায় বা বিষয় সব বাদ দেওয়া হয়েছে তারা ক্লাস এমনিতেই এগুলো পড়ান না। যে সিলেবাস প্রকাশিত হয়েছে এটা শেষ করতে কমপক্ষে ১০ মাস সময় দরকার। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে জানালে তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবং গতকাল বেলা ১২টায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন এনসিটিবিতে।

এনসিটিবি এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য হিসাববিজ্ঞান, কৃষি, চারুকারু, বাংলা-১ পত্র, বাংলা-২য় পত্র, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, জীববিজ্ঞান, বৌদ্ধধর্ম, ব্যবসা উদ্যোগ, ক্যারিয়ার এডুকেশন, রসায়ন, খ্রিস্টান ধর্ম, অর্থনীতি, ইংরেজি-১ম পত্র, ইংরেজি-২য় পত্র, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, ভূগোল ও পরিবেশ, উচ্চতর গণিত, হিন্দু ধর্ম, ইতিহাস, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, আইসিটি, ইসলাম ও আদর্শ শিক্ষা, গণিত, শারীরিক শিক্ষা, পদার্থ বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে।

এনএম/এনএফ