মার্টিন স্কর্সিস, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরন ও ক্রিস্টোফার নোলান

জনপ্রিয় সিনেমা নিয়ে আলোচনা মানেই নায়ক-নায়িকা। অথচ মূল কারিগর পরিচালক থেকে যান পর্দার আড়ালেই। তবে এমনটা আবার সবার ক্ষেত্রে নয়। এই লেখা এমন ১০জন পরিচালককে নিয়ে সাজানো হয়েছে। যাদের নামই যথেষ্ট সিনেমা হিটের জন্য। জেনে নেয়া যাক তাদের সম্পর্কে। 

মার্টিন স্কর্সিস

মার্টিন স্কর্সিস
আমেরিকার সমাজব্যবস্থাকে বেশিভাগ সময় সিনেমার তুলে আনেন মার্টিন স্কর্সিস। মার্কিন পরিচালক হয়ে এমন বিষয় পর্দায় দেখানোর সাহসের জন্যই বিখ্যাত তিনি। এছাড়াও ক্যাথলিকদের বিভিন্ন ধারণাকেও সিনেমায় দেখিয়েছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘র‌্যাগিং বুল’, ‘গুডফেলাস’, ‘ওল্ফ অব ওয়াল স্ট্রিট’, ‘কেপ ফেয়ার’, ‘ক্যাসিনো’, ‘গ্যাংস অব নিউ ইয়র্ক’, ‘দ্য অ্যাভিয়েটর’, ‘দ্য ডিপার্টেড’, ‘শাটার আইল্যান্ড’। মার্টিন স্করসিসকে বলা হয় ‘মাস্টার অব গ্যাংস্টার ফিল্মস’। সিনেমায় এত সফল হলেও মাত্র একবার তার হাতে উঠেছে অস্কার। ‘দ্য ডিপার্টাড’-এর জন্য ২০০৭ সালে সেরা পরিচালক বিভাগে এই একাডেমিক পুরস্কার পান তিনি। ১৯৯০ সালে স্কর্সিস চলচ্চিত্র ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। এটি একটি অলাভজনক সিনেমা সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান।

স্টিভেন স্পিলবার্গ 

স্টিভেন স্পিলবার্গ 
হলিউডের সর্বকালের সেরা পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে কোনো ফ্লপ সিনেমা নেই তার। আধুনিক পরিচালকদের সঙ্গেও চলছেন সমানতালে। ‘ইন্ডিয়ানা জোনস’ সিরিজের জন্য সবচেয়ে আলোচনায় আসেন এই পরিচালক। এছাড়াও তার হাতে নির্মাণ হয়েছে ‘শিন্ডারলিস্ট’, ‘জুরাসিক পার্ক’, ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’, ‘ট্রান্সফর্মারস’-এর মতো সিনেমা। তিনবার অস্কার পুরস্কার লাভ করেছেন স্পিলবার্গ। এছাড়া নির্মাতা হিসেবে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। 

ক্রিস্টোফার নোলান

ক্রিস্টোফার নোলান
সিনেমার নির্মাণের চেয়ে চিত্রনাট্যের জন্য বেশি সময় নেন ক্রিস্টোফার নোলান। তার বিখ্যাত সিনেমা ‘ইনসেপশন’-এর কথা অনেকেরই জানা। হয়তো কয়েকবার দেখে গল্প বুঝতে হয়েছে স্বপ্নের ভেতরে তথ্য চুরির রহস্য। এমনই এক ধাঁধাঁয় ফেলে দিয়েছিলেন এই পরিচালক। ‘ইনসেপশন’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। কিন্তু এর আগে ১০ বছর সময় নিয়েছেন সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করতে। এছাড়া ‘ইন্টারস্টলার’-এর চিত্রনাট্যের জন্যেও বেশ সময় নিয়েছিলেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে আরও রয়েছেদ ‘দ্য ডার্ক নাইট’, ‘টেনেট’, ‘ইন্সোমিনিয়া’, ‘ম্যান অব স্টিল’, ‘জাস্টিস লিগ’। 

জেমস ক্যামেরন 

জেমস ক্যামেরন 
শুধুমাত্র একজন হলিউডের পরিচালকই নন, জেমস ক্যামেরন সমূদ্রের গভীরে অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞানীদের কাজে বেশ জনপ্রিয়। ১৯৮৪ সালে ‘দ্য টার্মিনেটর’ সিনেমা দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। এরপর একের পর এক ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অ্যাভাটার’ ও ‘টাইটানিক’। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমার তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ‘অ্যাভাটার’ মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। কিন্তু এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন ১০ বছর আগে। সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিনেমাটি নির্মাণের জন্য জেমস ক্যামেরন এতদিন অপেক্ষা করেন। বক্স অফিসে ‘অ্যাভটার’ আয় করেছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ। 

কুয়েন্টিন টারানটিনো 

কুয়েন্টিন টারানটিনো 
হলিউডের আধুনিক সিনেমার জনপ্রিয় পরিচালক কুয়েন্টিন টারানটিনো। প্রযোজকদের অন্যতম পছন্দ তিনি। কারণ তার সিনেমা একদিকে যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠে তেমনি ব্যবাসায়িক দিক থেকেও ব্যাপক সফলতা এনে দেয়। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো ‘রিজার্ভিওর ডগস’, ‘পাল্প ফিকশন’, ‘কিল বিল’, ‘সিন সিটি’, ‘ডেথ প্রুফ’, ‘ডি জ্যাংগো আনচেইনড’, ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’। সিনেমার সঙ্গে গান যক্তি করে নির্মাণে ভিন্নতা যোগ করেছেন কুয়েন্টিন । এছাড়াও তার সিনেমার বৈশিষ্ট্য নন-লিনিয়ার স্টোরিলাইন, গ্রাফিক ভায়োলেন্স ও ডার্ক কমেডি। 

উডি অ্যালেন 

উডি অ্যালেন 
৫০ বছর ক্যারিয়ারে আজও সমান জনপ্রিয় উডি অ্যালেন। হলিউডে নিজের একক স্টাইল তৈরি করেছেন তিনি। ভক্তরা নাম না দেখেই বলতে পারবেন এটি তার সিনেমা। ২৪ বার অস্কার অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এরমধ্যে চার বার এই একাডেমিক পুরস্কার অর্জন করেন। ‘অ্যানি হল’, ‘ম্যানহাটান’, ‘হান্নাহ’, ‘অ্যান্ড হার সিস্টার’, ‘এভরিওয়ান সেইস আই লাভ ইউ’, ‘ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা’, ‘মিডনাইট ইন প্যারিস’ তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমা। 

পিটার জ্যাকসন 

পিটার জ্যাকসন 
‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’ সিনেমার জন্য বিখ্যাত হন পরিচালক পিটার জ্যাকসন। যা তাকে সেরা পরিচালক বিভাগে অস্কার এনে দেয়। বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী এবং বিখ্যাত পরিচালকদের একজন তিনি। তার বেশিরভাগ সিনেমা মহাকাব্যের আদলে নির্মাণ করা। যেগুলোর দৃশ্যায়নে তিনি সবসময় চমক দেখিয়েছেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কিং কং’ ও ‘দ্য লাভলী হোনস’।

কোয়েন ব্রাদার্স 

কোয়েন ব্রাদার্স 
জুয়েল কোয়েন ও ইথান কোয়েন দুই ভাই। যৌথভাবে সিনেমা প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও  পরিচালনা করেন তারা। দর্শকদের জন্য সচেতনমূলক গল্পকে পর্দায় সবসময় তুলে ধরেন। তাদের বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘রেইজিং অ্যারিজোনা’, ‘মিলার্স ক্রসিং’, ‘ফার্গো’, ‘দ্য বিগ লেবোস্কি’, ‘হোয়্যার আর্ট থো‘, ‘নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান’, ‘বার্ন আফটার রিডিং’, ‘আ সিরিয়াস ম্যান’ উল্লেখযোগ্য। ১২বার অস্কারে মননোয়ন পেয়েছেন এই পরিচালক জুটি। এরমধ্যে ‘নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান’ সিনেমার জন্য সেরা পরিচালক বিভাগে ৮০তম অস্কার অ্যাওয়ার্ড উঠে তাদের হাতে। 

এডগার রাইট 

এডগার রাইট 
আধুনিক পরিচালকদের মধ্যে শীর্ষ জনপ্রিয় এডগার রাইট। অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। তার ‘শন অব দ্য ডেড’, ‘হট ফুজ’ ও ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস অ্যান্ড’ দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় রাইটের ‘বেবি ড্রাইভার’। বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলে এই সিনেমা। এরপর থেকে হলিউডের সেরা পরিচালক হিসেবে তিনি দর্শকের কাছে সমাদৃত হন। 

ক্লিন্ট ইস্টউড 

ক্লিন্ট ইস্টউড 
সার্জিও লিওনের ডলারস ট্রিলজি সিরিজে অভিনয় দিয়ে পরিচিতি পান ক্লিন্ট ইস্টউড। এটি মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। এরপর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৭১ সালে ‘প্লে মিস্টি ফর মি’ দিয়ে পরিচালনা শুরু করেন। তার প্রথম সিনেমা বক্স অফিসে ব্যাপক ব্যবসা করে। এরপর থেকে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনায় মনযোগী হন ক্লিন্ট। ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আনফরগিভেন’ চার বিভাগে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অস্কার অর্জন করে। 

এইচএকে/এমআরএম