ভারতের কলকাতায় কেকের অনুষ্ঠান। তা নিয়ে ফেসবুক লাইভে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী। এরপর কেকের হঠাৎ মৃত্যুতে, সেই বিতর্ক অন্য দিকে মোড় নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সিনেমা-সংস্কৃতি জগত, অনেকেরই আক্রমণে মুখে পড়েছেন রূপঙ্কর। এবার তাকে তুলোধুনো করলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

ফেসবুকে অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় লেখেন, ‌‘আর আমার আরও একটা প্রশ্ন আছে। অভিনেতা/অভিনেত্রীরা যখন মানুষকে এন্টারটেন করার জন্য গান গাওয়ার চেষ্টা করেন, সবাই সেটা দারুণ পারেন তা নয়। অভিনেতারা সব পারেন এবং সব করবেন তা তো হয় না। কিন্তু গ্রাম হোক বা শহরতলী, স্টেজে গান-নাচ ছাড়া বেশি কিছু করার নেই। ম্যাজিক তো দেখানো যায় না, তখন আমাদের খোরাক বানানো হয়। ট্রোল করা হয়। অপমান, খিল্লি, মিম কোনো কিছুই বাদ থাকে না। কিন্তু আমাদের কাজটা এতটাই সহজ যে অন্য প্রফেশনের সবাই এটা করতে চায় এবং করেও। ডাক্তাররা তাদের কাজের ফাঁকে এসে শুটিং করে যান, চার-পাঁচটা নাম তো এখনই বলে দিতে পারব। ব্যাংকের চাকরিজীবীরাও পর্দায় মুখ দেখাতে চায়, দেখায়ও। প্রফেসর, টিচার, বিভিন্ন প্রফেশনের লোকেরা নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা যারা শুধুই অভিনয় করি, তারা কিন্তু ইচ্ছে করলে টুক করে গিয়ে একদিন হাসপাতালে বা ব্যাংকে কাজ করতে পারি না।’

একই সঙ্গে রূপঙ্করের মন্তব্য বিতর্ক নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। লেখেন, ‘রূপঙ্কর বাগচীকে আমার একটাই প্রশ্ন, উনি ভাল গান গাইতে পারেন, ওটাই ওনার প্রফেশন, উনি অভিনয় করার খাতায় নাম লেখালেন কেন? একজন অভিনেতা, যে ওনার জায়গায় রোলটা পেলে ওনার চেয়ে বেশি ভাল অভিনয় করবেন, তার পেটে লাথি মারলেন এবং ডিরেক্টর বা প্রযোজকরাও কেন একজন গায়ককে অভিনয় করার জন্য নিচ্ছেন? রূপঙ্করের অভিনয় দেখার জন্য কেউ চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করবে? না সিরিয়াল দেখবে না হলে টিকিট কাটবে? হ্যাঁ ওনার গান শোনার জন্য নিশ্চয়ই টিকিট কাটবে বা আজকের পর কী করবে জানি না। আমাদের তো সবার শর্টটার্ম মেমরি লস আছে। আমরা দু’দিন চিৎকার করি, তারপর সব ভুলে যাই। ওনার খুবই খারাপ অভিনয় নিয়ে এতদিন কেউ খিল্লি মারেননি কিন্তু, আমি সিওর এবার মারবেন। কেউ মারা গেলে তখন আমাদের চোখ খোলে কিনা? গায়ক, গায়িকারও অভিনয় করবেন। কিন্তু অভিনেতারা গান গাইলেই প্রবলেম। অভিনেতারা মুখ খুললে প্রবলেম। ভোট খালি আমরা দিই, বাকিদের কোনও দায় নেই।’

যা বলেছিলেন রূপঙ্কর

ফেসবুক লাইভে রূপঙ্কর বলেন, ‘কেকে দারুণ গায়ক। কিন্তু ওর ভিডিও দেখে আমি অনুভব করলাম, আমাদের কলকাতায় কেকে-র লেভেলে যারা যারা নাম করেছেন অর্থাৎ ন্যাশনাল লেভেলে কেকে-র যে জায়গা সেই অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের লেভেলে যারা যারা নাম করেছেন, সেই পজিশনে যে সমস্ত গায়ক-গায়িকা আমাদের কলকাতায় রয়েছেন যেমন আমি, অনুপম, সোমলতা, ইমন, রাঘব, মনোময়, উজ্জ্বয়িনী, ক্যাকটাস, রূপম তারা সবাই কেকে-র থেকে ভালো গাই।’

দর্শকদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের নিয়ে আপনারা এতো উত্তেজনা বোধ করেন না কেন? কে এই কেকে? আমরা যেকোনো কেকে-র থেকে বেটার। আমি যে কজন সিঙ্গারের নাম উচ্চারণ করলাম তারা যেকোনো পারফরম্যান্সে কেকের থেকে ভালো। বম্বে নিয়ে এতো উত্তেজনা কেন? কতদিন বম্বের পিছনে ঘুরবেন? সাউথ ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব, উড়িষ্যাকে দেখুন, বাঙালি হোন প্লিজ।’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার কলকাতায় নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার শো চলাকালীনই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন কেকে। ভীষণভাবে ঘামছিলেন তিনি। বার বার মুখ, কপাল, মাথা মুছে নিচ্ছিলেন তোয়ালে দিয়ে। জল খাচ্ছিলেন ঘন ঘন। যা দেখেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শো-এর মাঝপথেই অস্বস্তি হতে শুরু করে তার। কিন্তু তবুও ‘কমিটমেন্ট’ বজায় রেখে শো শেষ করেন তিনি। প্রোডাকশন টিমের এক সদস্য জানান, ১০ জনের জায়গা, সেখানে যদি ২৫ জন লোক ঢোকানো হয়, তাহলে সমস্যা তো হবেই। তার কথায়, এসি কাজ করছিল না। জায়গাটা গরম হয়ে গিয়েছিল। এত লোক সাফোকেশন হচ্ছিল।

ওএফ