দেশের বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, সংগঠক ও শুদ্ধ সংগীত চর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব মিতা হক রোববার (১১ এপ্রিল) ভোরে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাকে নিয়ে লিখেছেন আরেক নন্দিত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও সংগঠক তপন মাহমুদ

শিল্পী মিতা হকের হঠাৎ মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আমি হাজারও কিলোমিটার দূরে সিডনিতে বসে হতবিহ্বল। কত স্মৃতি, কটা লিখব। মিতাকে আমি প্রথম দেখি সম্ভবতঃ আশির দশকে, যখন সে লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ওখানে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আমি রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ে বিচারক হয়ে গিয়েছিলাম। মিতা সে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলো। তারপরে কয়েক বছর পর ওকে দেখি বিটিভিতে, একই অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করার সময়। সে থেকে এখন পর্যন্ত অনেক স্মৃতি।

যদিও আমরা রবীন্দ্রসংগীত ভিত্তিক দু'টি প্রতিষ্ঠানে ছিলাম, তারপরেও আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কটা সবসময়ে ছিল ভাই-বোনের মতোই উষ্ণ। ২০১৮তে যখন মিতা অসুস্থ ছিলো, আমরা বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা থেকে তাকে সম্মাননা দিয়েছিলাম। সেই মঞ্চে মিতা আমাকে বলেছিলো, 'আপনি আমার থেকে বয়সে কত বড়, আপনিই আমাকে সম্মাননা দিচ্ছেন কেন'!! আমার উত্তর ছিল তুমি যে তারচেয়েও বড় শিল্পী, তাই তোমাকে সম্মাননা দিচ্ছি। আমরা উভয়েই অশ্রুসজল হয়েছিলাম। ওর মনটা ছিল আকাশের মত উদার। একজন প্রকৃত ও পরিশুদ্ধ শিল্পী বলতে যা বোঝায় মিতা তাই ছিলেন। রবীন্দ্রসংগীত বিকৃতির বিরুদ্ধে সে ছিল আপোষহীন।

আজ তার আকস্মিক মৃত্যু আমাদের রবীন্দ্রসংগীত ভুবনকে রিক্ত করে দিয়েছে। আমি তার আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

আরআইজে