ফোক গানে বিস্ময় জাগানিয়া কণ্ঠের নাম শারমিন আক্তার। ২০১৬ সালে চ্যানেল আইয়ের সংগীত রিয়েলিটি শো ‘বাংলার গান’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের প্রতিভার জানান দেন তিনি। তার দরাজ গায়কীতে মুগ্ধ হয়েছেন প্রতিযোগিতার বিচারক ও দেশবাসী। কিন্তু সেই শারমিনের কণ্ঠে এখন থমকে আছে। নিস্তেজ হয়ে তিনি পড়ে রয়েছেন হাসপাতালের বিছানায়।

জানা গেছে, থাইরয়েডের সমস্যা থেকে শারমিনের শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা জটিলতা। ক্রমশ তার অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হচ্ছে। মেধাবী এই গায়িকার বর্তমান অবস্থা জানার জন্য তার বাবা হুমায়ুন কবির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা পোস্ট

তিনি বলেন, ‘গত ১৪ দিন যাবত শারমিন অসুস্থ। ওর থাইরয়েডের সমস্যা ছিল। সেটা থেকে এখন রক্ত সঞ্চালনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম রক্ত সঞ্চালন হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক না হলে বড় ধরণের বিপদ হতে পারে।’

গত ২ নভেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন শারমিন। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ালেও তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ জন্য ৬ নভেম্বর বাসা থেকে তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না।

হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, ‘হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেওয়ার পর তারা ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন আমি চ্যানেল আইতে গিয়ে যোগাযোগ করি। কারণ তাদের মাধ্যমেই আমার মেয়েটা পরিচিতি পেয়েছে। তারা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে দেন, সেই সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের একজন বড় কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গত ১৪ নভেম্বর থেকে এখানে আছে। এত দিন সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হলেও গতকাল (২০ নভেম্বর) থেকে শারমিনকে আলাদা বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

শারমিনের শরীরে ঠিক কী রোগ বাসা বেঁধেছে? এ প্রশ্নের জবাবে তার বাবা বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে এখনো কিছু বলেনি। তবে তাদের ধারণা, এটা ব্লাড ক্যানসার হতে পারে।’

ইতোমধ্যে শারমিনের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়েছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে। সংগীতাঙ্গন ও দেশের মানুষের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন তার বাবা হুমায়ুন কবির।

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা বাউল শিল্পী ছিলেন। আমি নিজেও গান করি। এটা থেকেই আমাদের জীবন চলে। কিন্তু করোনার কারণে দুই বছর আয়-রোজগার একেবারে বন্ধ ছিল। আমরা গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেই। সেই মানুষেরা যদি আমাদের বিপদে একটু মায়া, মমতা, সহযোগিতা দেখান, তাহলে খুশি হবো।’

শারমিনের যথাযথ চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতাও কামনা করলেন হুমায়ুন কবির। তার ভাষ্য, ‘আমি যতদূর শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী খুব শিল্পীবান্ধব মানুষ। তিনি শিল্পীদের ভালোবাসেন, তাদের পাশে থাকেন। আমার মেয়েটার দিকেও তিনি যেন নজর দেন। তাহলে দেশের সম্পদটা, আমার মেয়েটা বেঁচে যাবে।’

উল্লেখ্য, শারমিনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়। দাদা-বাবার পথ ধরে তিনিও গানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার সুরেলা, দরাজ কণ্ঠে লোকজ, আধ্যাত্মিক গানগুলো ভিন্ন মাত্রা পায়। সেই কণ্ঠ যেন থেমে না যায়, অকালে যেন ঝরে না যায় এই গানের ফুল, সেজন্য সংগীতাঙ্গন ও সরকারের এগিয়ে আসা জরুরি।

কেআই/আরআইজে