ভারতীয় বাংলা সিনেমা যারা দেখেন, তারা প্রত্যেকেই এই অভিনেতাকে চেনেন। কিন্তু নাম হয়ত অনেকেই জানেন না। কলকাতার অসংখ্য সিনেমায় পার্শ-ভিলেনের চরিত্রে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু তিনি কতটা দক্ষ অভিনেতা, সেটা মূলত ফুটে উঠেছে বলিউডের পর্দায়। ‘স্পেশ্যাল ২৬’ কিংবা ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমায় তার তুখোড় অভিনয় দর্শকদের মনে গেঁথে আছে এখনো।

খ্যাতিমান এই অভিনেতার নাম রাজেশ শর্মা। জেনে অবাক হবেন, এই অভিনেতা জীবিকার জন্য প্রথম জীবনে ট্যাক্সি পর্যন্ত চালিয়েছিলেন। সেই দুঃসহ সময় মোকাবিলা করে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন আর মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন সিনেমার পর্দায়।

রাজেশের জন্ম ১৯৭১ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায়। স্কুলের গণ্ডি পেরনোর পর দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর কলকাতায় একটি নাটক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। অভিনয় ভালবাসতেন। তাই মঞ্চে উঠে সাবলীল সংলাপ বলে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে বেশি সময় লাগেনি তার।

কিন্তু মেধা-প্রতিভা থাকলেও যে রাতারাতি সাফল্য আসে না! ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন রাজেশ। ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত কেউ না থাকায় কোনো সিনেমায় সুযোগ পাচ্ছিলেন না। সে কারণে জীবিকার তাগিদে মুম্বাইয়ের রাস্তায় ট্যাক্সি চালানো শুরু করেন।

১৯৯৬ সালে বলিউডের সিনেমায় সুযোগ পান রাজেশ শর্মা। ‘মাচিস’ নামের ওই সিনেমাটি পেয়েছিল ভারতের জাতীয় পুরস্কার। কিন্তু রাজেশের ভাগ্য ঘোরেনি। জনপ্রিয়তার রেশ তার গায়ে লাগেনি। যার কারণে পরবর্তী প্রায় ৯ বছর বলিউডে কোনো কাজ জোটেনি তার।

অগত্যা উপায় না পেয়ে কলকাতায় চলে আসেন রাজেশ। থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনয় দেখে পছন্দ হয় অপর্ণা সেনের। তিনি ২০০০ সালে ‘পারমিতার একদিন’ সিনেমায় ছবিতে সুযোগ দেন রাজেশকে। শুরু হয় তার টালিউডে পথচলা।

একটার পর একটা সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন, আর দর্শকদের কাছে দারুণ পরিচিতি পেয়েছেন। যদিও অধিকাংশ সিনেমায় তাকে দেখা গেছে নেতিবাচক চরিত্রে। তবে প্রতিটি ভূমিকাতেই তিনি যে অনবদ্য ছিলেন, তা অকপটে স্বীকার করবেন যে কেউ।

টালিউডের সুপারহিট সিনেমা ‘প্রতিবাদ’-এ টিনু গুন্ডার ভূমিকায় অভিনয় করেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন রাজেশ। এ কারণে এখনো টালিপাড়ায় তাকে টিনু গুন্ডা নামেই চেনেন অনেকে! তবে ‘দাদা ঠাকুর’, ‘বাদশা দ্য কিং’, ‘সোনার সংসার’, ‘সাথী’, ‘দেশ’, ‘চ্যাম্পিয়ন’-এর মতো সফল সিনেমাগুলোতেও তাকে দেখা গেছে।

দীর্ঘ ৯ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে ২০০৫ সালে বলিউডে ফেরেন রাজেশ শর্মা। বিদ্যা বালনের ‘পরিণীতা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। কিন্তু পরিচিতি সেভাবে আসেনি। ২০১১ সালে মূলত মুম্বাই ইন্ডাস্টির সবার নজরে আসেন এ অভিনেতা। ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ সিনেমায় তার অনবদ্য অভিনয়ের ফলে বলিউডের দর্শকরা আপন করে নেয় তাকে।

পরবর্তীতে ‘চিল্লার পার্টি’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’, ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’, ‘তানু ওয়েডস মানু রিটার্নস’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, ‘এমএস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি’, ‘বেগম জান’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’, ‘রেস থ্রি’, ‘ভেদা চেন্নাই’, ‘সুপার ৩০’, ‘মারদানি ২’, ‘বাটোলা হাউজ’, ‘ড্রিমগার্ল ও ‘লক্ষ্মী’র মতো দর্শকপ্রিয় সফল সিনেমাগুলোতে অভিনয় করেছেন রাজেশ।

কেআই