‘বিউটি উইথ ব্রেইন’-কথাটি তার সঙ্গে দারুণভাবে যায়। দেখতে যেমন সুন্দরী, আবার মেধা-মননেও এগিয়ে। তিনি জাহারা মিতু। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শোবিজে পথচলার শুরু। এরপর উপস্থাপনা, নাটক এবং সবশেষে সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন। সিনেমা ও ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে ‘ঢাকা পোস্ট’-এর মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। লিখেছেন কামরুল ইসলাম

ফেসবুক খুললেই আপনার রোম্যান্টিক কিংবা বিরহের কাব্যিক স্ট্যাটাস। এগুলো কি ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি?

আসলে আমার লেখালেখির অভ্যাস সেই ছোট বেলা থেকেই। ক্লাস সেভেনে থাকতে আমি লেখার জন্য পুরস্কার পেয়েছিলাম। অনেক গল্প, কবিতা, ছড়া লিখেছি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততার মোড় শোবিজের দিকে ঘুরেছে বটে। কিন্তু ভেতরে লেখার মানসিকতা রয়ে গেছে ঠিকই। আগে তো আমি ফেসবুকে অনেক লিখতাম। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর কিছুটা কমিয়ে দিয়েছি। ফেসবুকে কোনো ছবি পোস্ট করার আগে আমি সেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি। তারপর ভাবনায় যে কথাগুলো আসে, সেগুলোই লিখে দেই।

তাহলে কি ভক্তরা আপনার কাছ থেকে অচিরেই বই পাচ্ছে?

বই করার ভাবনা মাথায় আছে। তবে আমি আসলে লেখার ধারাবাহিকতা ধরে রাখি না। যেমন একটা বিষয়ে আজ লিখলাম। দেখা গেলো, আগামী ছয় মাসেও সেই বিষয়টা নিয়ে আর লেখা হয় না। তাই বই করার মতো পান্ডুলিপি সাজানো হয়ে ওঠে না। তবুও আশা আছে, দেখা যাক।  

‘আগুন’ দিয়ে শুরু করলেন, নিভে গেলো! ‘কমান্ডো’তে যুক্ত হলেন, তাও এগোচ্ছে না; ‘যন্ত্রণা’তে যুক্ত হলেন, এলো লকডাউন! তাহলে কি ভাগ্যটাই খারাপ?

না, এটা আমি বলতে চাই না। কারণ পুরো পৃথিবীর অবস্থাই তো প্রতিকূল। সবার ক্ষেত্রেই একই বাস্তবতা। আমার সময়ের যারা কাজ করছেন, তাদেরও কোনো সিনেমা কিন্তু মুক্তি পায়নি। আমরা সবাই আসলে একই পরিস্থিতির শিকার। তবে আমি ক্যারিয়ারের শুরুতেই যে বড় বড় সুযোগগুলো পেয়েছি, এটাই তো সৌভাগ্য। এমনটাও বা ক’জনের ভাগ্যে জোটে। তাছাড়া আমি বিশ্বাস করি, সামনে নিশ্চয়ই ভালো দিন আসবে। কারণ পরিস্থিতি ঠিক হলে আমার তিনটি সিনেমাই এক এক করে মুক্তি পাবে। ব্যাক টু ব্যাক তিনটি ভালো সিনেমা মুক্তি পাওয়া আমার জন্য আরও বড় পাওয়া বলে মনে করি আমি।

সিনেমাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কী?

‘আগুন’-এর কোনো আপডেট জানি না। গত বছরের মার্চে সিনেমাটি নিয়ে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তারা বলেছিলেন, করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে কাজ শুরু করবেন। আর ‘কমান্ডো’ নিয়ে কয়েক দিন আগেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। থাইল্যান্ডের সীমান্ত খুলে দিলেই আমরা সেখানে যাব শুটিং করতে। অন্যদিকে ‘যন্ত্রণা’ সিনেমাটির ব্যাপারেও সব কিছু চূড়ান্ত। লকডাউন উঠে গেলেই আমরা কাজে নামতে পারব।

নতুন কোনো সিনেমায় কাজের আলাপ চলছে?

দুটো সিনেমার ব্যাপারে প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশের সিনেমা, তবে ভারতের তারকারাও থাকবেন। এখনো যেহেতু চূড়ান্ত হয়নি, তাই এর চেয়ে বেশি বলতে পারছি না।

নায়িকাদের খোলামেলা হওয়া কতটা জরুরি?

নায়িকা মানে গ্ল্যামার, ফ্যান্টাসি। দর্শকরা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে। তো নায়িকা যদি ঘরের মানুষের মতোই হয়, তাহলে তাকে নিয়ে তো কেউ স্বপ্ন দেখবে না। নায়িকাকে ঘরের মানুষের মতো ভাবলে তো হবে না। আরেকটা দিক হলো, এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কে কীরকম পোশাক পরবেন, কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন, সেটা তার ইচ্ছা। এখন প্রযুক্তির যুগ, আধুনিকতার যুগ; এগুলোকে কোনো গণ্ডির ভেতরে থেকে ভাবলে চলবে না। অনেকে বলেন, আগের নায়িকারা খোলামেলা ছিলেন না, সাহসী ছিলেন না। কিন্তু আমার মতে, তারাও সাহসী ছিলেন। তখন তো মেয়েরা তো পর্দার আড়াল থেকে বেরই হতে পারতো না। সেই সময়ে তারা সিনেমায় অভিনয় করেছেন, নাচ-গান করেছেন; সেটা কি সাহসিকতা নয়? এখন কেবল যুগের সঙ্গে সেই সাহসিকতা বা খোলামেলার ব্যাপারটায় পরিবর্তন এসেছে।  

অভিনেত্রী না হলে জীবনে কী হতেন?

ফ্যাশন ডিজাইনার। কারণ আমি এই বিষয়েই পড়াশোনা করেছি।

ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর কোনো তিক্ত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন?

একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। একবার একটা নাটকের শুটিং করছিলাম। আমার সঙ্গে আরও একজন অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি সেটে আসার পর পরিচালকের সঙ্গে চেঁচামেচি শুরু করেন। কেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তাকে না নিয়ে আমাকে নেওয়া হলো। নতুন একটা মেয়ে এসে ভালো চরিত্র পেয়ে গেলো, তিনি পাননি! যদিও আমি জানতে পেরেছিলাম, তাকে চিত্রনাট্য দেওয়া হয়েছিল। তিনি না পড়ে কেবল গানের দৃশ্যে থাকার সুবাদে নিজের চরিত্রটি বেছে নিয়েছিলেন।

সিনেমা এগোচ্ছে না, সেক্ষেত্রে নাটকে কাজ করছেন না কেন?

ছোট পর্দা থেকেই তো আমার পথচলার শুরু। নাটকেও কাজ করেছিলাম আমি। কিন্তু সিনেমায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে করছি না। ভবিষ্যতেও করবো না, এমন নয়। সিনেমার জন্য আমি নিজের ফিটনেস, লুক সব কিছুতে পরিবর্তন এনেছি। নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আমি চাই এটা দর্শকরা আগে সিনেমায় দেখুক। তারপর নাটকে।

কেআই/আরআইজে