বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ। তাই কিছুটা সংশয় নিয়েই ফোন করা। রিসিভ করে হ্যালো বললেন। গলায় অসুস্থতার ছাপ স্পষ্ট। তবু আলাপে আলাপে গল্প গড়াল অনেকখানি। শারীরিক অসুস্থতাকে পাশ কাটিয়ে মুহূর্তের জন্য খুলে দিলেন জমে থাকা কথার দুয়ার।

বহুল আলোচিত ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমার জন্য বডিবিল্ডিং করেছেন শুভ। ঢালিউডের প্রথম নায়ক হিসেবে সিক্স প্যাক বানিয়ে দেখিয়েছেন। কিন্তু কাজটি করতে গিয়ে অবর্ণনীয় শ্রম দিতে হয় তাকে। যার ফলে পায়ে প্রচণ্ড চোট পান এ অভিনেতা। যা তাকে এখনো ভোগাচ্ছে। আলাপের শুরুতেই তাই উঠে এলো পায়ের প্রসঙ্গ। শুভ জানালেন, থেরাপি চলছে। তিন সপ্তাহ যাওয়ার আগে তেমন কিছুই বলা যাচ্ছে না। আপাতত ঘরবন্দি হয়ে শোয়া-বসাতেই কাটছে সময়।

এরই ফাঁকে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) তিনি নিয়েছেন করোনভাইরাস প্রতিরোধি টিকার প্রথম ডোজ। জানতে চাইলাম, এত দেরি কেন? জবাবে শুভ বললেন, ‘আমার নিবন্ধনই নিচ্ছিল না! গত বছরের ডিসেম্বরে আমি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। এরপর সুস্থ হয়ে মুম্বাইতে গিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমার শুটিং করেছি। ফিরেছি এপ্রিলে। বেশ কয়েকবার টিকার জন্য নিবন্ধনের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো কারণে আমার নিবন্ধন গৃহীত হচ্ছিল না। অবশেষে মঙ্গলবার টিকার প্রথম ডোজ নিলাম।’

পা থেকে করোনা, অসুস্থতার খবর তো হলো। এবার তবে কাজের খবরে আসা যাক। গুটি কয়েক প্রশ্নে সাজানো এই পর্বে মুখোমুখি ঢাকা পোস্ট আরিফিন শুভ-

কিছু দিন আগে ‘নূর’ সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন। সিনেমাটির প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে রয়েছে?

একটা সিনেমা শুরু করার আগে প্রি-প্রোডাকশনে অনেক কাজ করতে হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেটা করা যাচ্ছে না। কয়েক দিন পরই আমাদের লোকেশন রেকিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাও এখন পেছাতে হচ্ছে। ‘নূর’-এর গল্প একটা মফস্বল শহরকে ঘিরে। সিংহভাগ শুটিং হবে আউটডোরে। কিন্তু কবে নাগাদ আমরা কাজটা শুরু করতে পারব, তা কেউই জানি না!

এই সিনেমায় আপনার সঙ্গে কে থাকছেন?

সেটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। কারণ সিনেমাটি নিয়ে আমরা সবাই ভীষণ এক্সাইটেড। হাঁকডাক নয়, আমরা চাই কাজের পর সবাই জানুক।

‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমার কাজ কতদূর বাকি? 

মুম্বাই অংশের কাজ তো শেষ হয়েছে। বাকি আছে বাংলাদেশের শুটিং। এ মাসেই সেটা হওয়ার কথা। কিন্তু এখানেও সেই একই প্রতিবন্ধকতা-করোনা।

বারবার করোনার প্রসঙ্গ আসছে। আপনার পর্যবেক্ষণে এই মহামারিতে আসলে ইন্ডাস্ট্রির কেমন ক্ষতি হয়েছে?

দেখুন, আমরা যারা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত, তারা মূলত ফ্রিল্যান্সার। কাজ করলে তবেই আমাদের আয় হয়। গত দেড় বছর ধরে সিনেমা অঙ্গনে প্রায় অচলাবস্থা। বসে বসে কতদিন চলা যায়। আপনি অন্য শিল্পীদের সঙ্গেও কথা বলে দেখুন, অধিকাংশের অবস্থা বেগতিক। দুই দশক আগেও দেশে ১২’শ হল ছিল। সেই সংখ্যাটা কমতে কমতে কততে এসেছে, সবাই জানেন। চোরাবালিতে আমাদের গলা পর্যন্ত আগেই ডুবে ছিল। এই করোনা-লকডাউন এসে সেটা নাকে গিয়ে ঠেকেছে। এখন কেবল নাকটা বাইরে আছে, কোনোমতে শ্বাস নিচ্ছি।

কলকাতার ‘আহারে’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। এরপরও সেখানকার নতুন কোনো সিনেমায় আপনাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?

‘আহারে’র পর আমি অন্তত পাঁচ-ছয়টি সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। এমনও হয়েছে যে, চূড়ান্ত আলাপ শেষে পরিচালক আমাকে চিত্রনাট্য পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই যে করোনা! ২০২০ সালের প্রথম দিকেই তো করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ল। তাই সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। তবে আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখানে পুনরায় কাজ করা হবে।

কেআই/আরআইজে