এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব বিন্যাস, নগরজীবন রেখা, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধার মানদণ্ড প্রণয়ন, ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময়— সবমিলিয়ে রাজধানী ঢাকার সমস্যাগুলো কমিয়ে পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

রাজউক বলছে, শহরের বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সুবিধাদি ও পরিষেবার বিপরীতে জনসংখ্যা নির্ধারণ করে শহরের সার্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন এলাকার উন্নয়নে কতটুকু অনুমোদন দেওয়া হবে, তা নির্ভর করবে ওই এলাকার সুবিধাদি প্রাপ্তির ওপর।

এমন সিদ্ধান্তের ফলে রাস্তার প্রশস্ততা যতটুকু, ভবনের ব্যবহারযোগ্য স্পেসের পরিমাণও সেই অনুপাতে হবে। আগে যেখানে প্রশস্ত রাস্তা না থাকলেও ৮/১০ তলা ভবন করা যেত, এখন সেখানে অনুমোদন পাওয়া যাবে ৪/৫ তলার। এ কারণে স্বল্প প্রস্তের রাস্তার পাশের জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে আবাসন বা ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে— মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন >> পূর্বাচলে ১১১ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণে জটিলতা!

ঢাকায় ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক সুবিধা ও সড়কের প্রশস্ততা অনুযায়ী। যেসব এলাকায় প্রশস্ত রাস্তা ও নাগরিক সুবিধা যেমন- পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা বেশি থাকবে সেসব এলাকায় বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা নিয়ে বাধা থাকবে না

এ কারণে ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখে গেছে, আগে যেখানে জায়গার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সুউচ্চ ভবনের অনুমোদন নেওয়া যেত, এখন প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে সুউচ্চ ভবন নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে নতুন ড্যাপের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে আগের আটতলা ভবনের স্থানে এখন চারতলা ভবনের অনুমোদন মিলবে। মূলত এটি করার কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাত সেখানকার নাগরিক সুবিধার বিবেচনায় রেখে ঢাকাকে একটি উন্নত বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা।

যে কারণে আগের ৮ তলা ভবনের স্থলে পাওয়া যাবে ৪ তলার অনুমোদন

নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, ঢাকায় ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক সুবিধা ও সড়কের প্রশস্ততা অনুযায়ী। যেসব এলাকায় প্রশস্ত রাস্তা ও নাগরিক সুবিধা যেমন- পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা বেশি থাকবে সেসব এলাকায় বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা নিয়ে বাধা থাকবে না। অন্যদিকে, যেসব এলাকায় বা প্লটের সামনে প্রশস্ত রাস্তা নেই সেসব এলাকার ভবন নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের শর্ত বেধে দেওয়া হয়েছে নতুন ড্যাপে। প্লটের সামনে প্রশস্ত রাস্তা কম হলে সেসব ভবন নির্মাণে মানতে হবে ড্যাপের নতুন নিয়ম। এর মানে পাঁচ কাঠার একটি জমির সামনে যদি প্রশস্ত রাস্তা না থাকে তাহলে সেখানে চারতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। আগে একই পরিমাণ জমিতে আটতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত।

নতুন ড্যাপে ১২ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত রাস্তার পাশে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) ধরা হয়েছে ১.৭৫ অর্থাৎ এমন প্রশস্ত রাস্তার পাশে পাঁচ কাঠার প্লটে পার্কিংসহ পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা যাবে। এমন হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন ড্যাপে ৬ থেকে ৮ ফুট প্রশস্ত রাস্তার পাশে ফ্ল্যাটের ফার ধরা হয়েছে ১.২৫। ৮ থেকে ১২ ফুট প্রশস্তের রাস্তার ফার ১.৫, ১৬ থেকে ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার ফার ২, ২০ ফুট রাস্তার ফার ২.৫, ৩০ ফুট রাস্তার ফার ৩, ৪০ থেকে ৬০ ফুট রাস্তার ফার ৩.৫ থেকে ৩.৭৫ ধরা হয়েছে। ফলে পাঁচ কাঠার একটি জমিতে আগে আট ও দশতলার নকশা পাওয়া যেত এখন পাওয়া যাবে পাঁচতলার।

প্লট বা জমির সামনের রাস্তা যত প্রশস্ত হবে সেখানে ফ্লোর স্পেস বেশি হলে ভবনের উচ্চতাও বাড়ানো যাবে। রাস্তার প্রশস্ততা কম হলে ভবনের ফ্লোর সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে ড্যাপে। আগে এমন বিধান ছিল না। ফলে আগের চেয়ে কম ফ্লোরের অনুমোদন পাওয়া যাবে। এ কারণে নতুন ড্যাপে কম প্রশস্তের জমির মালিকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আবাসন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা

অর্থাৎ প্লট বা জমির সামনের রাস্তা যত প্রশস্ত হবে সেখানে ফ্লোর স্পেস বেশি হলে ভবনের উচ্চতাও বাড়ানো যাবে। রাস্তার প্রশস্ততা কম হলে ভবনের ফ্লোর সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে ড্যাপে। আগে এমন বিধান ছিল না। ফলে আগের চেয়ে কম ফ্লোরের অনুমোদন পাওয়া যাবে। এ কারণে নতুন ড্যাপে কম প্রশস্তের জমির মালিকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আবাসন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন >> বাসযোগ্য ঢাকা-কতদূর?

বিষয়টির ব্যাখ্যা করে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, সামনে যতটুকু প্রশস্ত রাস্তা আছে তার ওপর নির্ভর করে প্ল্যান পাওয়া যাবে। আগে যদি একটি প্ল্যানে আটতলা পেতেন তাহলে নতুন ড্যাপের বিধি অনুযায়ী পাবেন তিন থেকে চারতলা। ফলে ফ্ল্যাটের কোয়ান্টিটি কমে যাচ্ছে। এ কারণে দাম বাড়বে এবং তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবে। যারা স্বল্প বেতনে বেসরকারি চাকরি করেন তাদের বেতনের ৬০ শতাংশ টাকা বাড়িভাড়া পরিশোধে চলে যায়। এমন সব মানুষের স্বপ্ন থাকে একটা ফ্ল্যাট কিনবেন সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে। নতুন ড্যাপের কারণে দাম বেড়ে গেলে সাধারণ এসব মানুষের পক্ষে আর ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে না।

সার্বিক বিষয় নিয়ে ডিটেল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শহরে নাগরিক সুবিধাগুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে ড্যাপকে সাজানো হয়েছে। কোন এলাকায় কতটুকু সুবিধা আছে, সেসব বিবেচনা করে সেই এলাকায় উন্নয়নের অনুমোদন দেওয়া হবে। এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব নির্ধারণ করে জনঘনত্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যদিও জনঘনত্বের পরিকল্পনা তিন বছর পরপর পরিবর্তনের বা হালনাগাদের সুযোগ রাখা হয়েছে।

বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম

নতুন ড্যাপ অনুযায়ী প্লট বা জমির সামনে প্রশস্ত রাস্তা থাকা-সাপেক্ষে ঢাকায় ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত হবে। সে কারণে আগের মতো উচ্চ ভবনের অনুমোদন পাবে না জমির মালিক বা ডেভেলপার কোম্পানিগুলো। ফলে ভবনের ফ্লোরের সংখ্যা কম হলে আগের মতো আনুপাতিক হারে ফ্ল্যাট ভাগাভাগিতে সংখ্যা কমে যাবে জমির মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর মধ্যে। এছাড়া আটতলার ভবনের জায়গায় বর্তমানে চারতলা ভবনের অনুমতি পাওয়ায় ফ্ল্যাটের সংখ্যা আগের চেয়ে কমে যাবে। সবমিলিয়ে নতুন ড্যাপ অনুযায়ী নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থেকে ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে একটি উদাহরণ টেনে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, ভবনের উচ্চতা নির্ধারণের কারণে একটি ছোট জায়গায় চারতলার প্ল্যান অনুমোদন পেলে সেই জমির মালিক কিন্তু ডেভেলপার কোম্পানিকে ফিটটি ফিটটি রেশিওতে আর দেবেন না। নিজে যখন পারবেন তখন চেষ্টা করবেন। ফলে ফ্ল্যাট নির্মাণের সংখ্যাও কমে আসবে। এখনও ঢাকায় সিংহভাগ জায়গায় ২/৩ তলা করে বাড়ি আছে। সেসব জায়গায় আর ফ্লোর বাড়বে না। ফলে আবাসনের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি থেকে যাবে। এ কারণে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে। এছাড়া ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা শ্রম দেন তাদের কাজের পরিধিও কমে যাবে।

আরও পড়ুন >> নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১ লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা

এসব বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ড্যাপ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে রাজউকের পক্ষ থেকে দেওয়া এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, আবাসন যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, একইভাবে স্বাস্থ্য সেইসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ও বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশও কি মানুষের মৌলিক অধিকার নয়? শুধুমাত্র বড় ইমারত নির্মাণ কি মানুষের সেই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারবে বা পারছে? ২০০৮ সালের আগে ধানমন্ডি এলাকায় প্রতি বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ কার্যকরের পর একই জমিতে দেড় থেকে দ্বিগুণ ইমারত নির্মাণের পরও বর্তমানে ফ্ল্যাটের মূল্য বর্গফুট ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বরং বর্তমান ড্যাপে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সুলভ আবাসনের ব্যবস্থার জন্য এই প্রথম ০.৭৫ প্রণোদনা এফএআর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেন মানুষ ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে একটি ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা অর্জন করে।

এ বিষয়ে ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপে এফএআর বা ভূমির সাপেক্ষে ভবনের মোট মেঝের ক্ষেত্রফলের অনুপাত বৈশ্বিক শহরগুলোর তুলনায় বেশি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য শহরে প্লটকেন্দ্রিক উন্নয়ন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

নতুন ভবনের নকশার আবেদন পাচ্ছে না রাজউক

প্রশস্ত রাস্তা না থাকায় আগে যেখানে ৮/১০ তলা ভবনের নকশা বা অনুমোদন পাওয়া যেত সেখানে নতুন ড্যাপ হওয়ার পর ৪/৫ তলা ভবনের অনুমোদন বা নকশা পাওয়া যাবে— বিষয়টি জানার পর থেকে ভবন নির্মাণের জন্য নকশা বা অনুমোদনের আবেদনের সংখ্যা কমে এসেছে। জমির মালিক বা ডেভেলপার কোম্পানিগুলো আগের মতো আবেদন করছে না। ফলে নতুন ভবনের নকশার আবেদন পাচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। মূলত, ভবনের ফ্লোর কমে যাওয়ায় নতুন করে ভবন বা বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় একটি পাঁচ কাঠার প্লট আছে সাজ্জাদ হোসেনের। জমির পাশেই একটি সাততলা বাড়ি আছে তার। ফাঁকা ওই স্থানে আরও একটি বাড়ি নির্মাণের চিন্তা ছিল। কিন্তু নতুন ড্যাপের বিধি অনুযায়ী প্রশস্ত রাস্তা না থাকায় ভবনের ফ্লোর সংখ্যা কমে যাবে, বিষয়টি জানার পর আপাতত নতুন বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ থেকে তিনি সরে এসেছেন।

এ বিষয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জায়গাটির সামনের রাস্তা খুব বেশি প্রশস্ত না। এ কারণে চার/পাঁচতলার বেশি অনুমোদন পাব না। ফলে নকশার অনুমোদনের জন্য রাজউকে আবেদন করতে গিয়েও ফিরে এসেছি। দেখি, সামনে এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আসে কি না।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে রাজউকে কেউ ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদনের জন্য আবেদন করছেন না। অথচ ২০২১ সালে ১০ হাজার ৩২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। এগুলোর বেশিরভাগই ছিল আবাসিক ভবনের অনুমোদন।

আরও পড়ুন >> কবরের ওপর কবর, স্থায়ী নয় সাড়ে ৩ হাত মাটিও

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের শেষদিক পর্যন্ত নয় হাজার ৬৫৬টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া আরও এক হাজারের বেশি আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু ২৩ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির পর নতুন করে ভবন নির্মাণের নকশার আবেদন তেমন জমা পড়ছে না রাজউকে।

এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন ড্যাপ অনুযায়ী ভবনের সামনের রাস্তা প্রশস্ত না থাকলে বেশি উচ্চ ভবন নির্মাণ করা যাবে না। এ কারণে জমির মালিকসহ ভবন নির্মাণকারীরা নতুন ভবনের জন্য নকশার আবেদন করছেন না। তারা ভাবছেন ড্যাপের এ নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভবন নির্মাণে ১০ তলার জায়গায় ৪/৫ তলার অনুমোদন আপাতত তারা নিতে চাচ্ছেন না। তারা ভাবছেন, সামনে কী ঘটে সেটা জেনে-বুঝে পরে ভবন নির্মাণ করবেন।

ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সার্বিক বিষয় নিয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাস্তবিক অর্থে ড্যাপে প্রস্তাবিত সব পরিকল্পনা কৌশলের সফলতা নির্ভর করবে তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ওপর। অতীতে ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রণীত কাঠামোগত পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা কিংবা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার দলিলগুলো সঠিক ও পূর্ণ বাস্তবায়নের অভাবে ঢাকা ক্রমান্বয়ে বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

‘তবে, এবারের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় আধুনিক নগর পরিকল্পনার বেশকিছু কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। এজন্য ঢাকা মহানগর এলাকায় কার্যরত স্থানীয় সরকারসমূহ যেমন- সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতি সংস্থাসমূহকে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’

এএসএস/এমএআর/